- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

ডুয়ার্সের চা বাগানের শ্রমিকদের রিপোর্ট

প্রদীপন, শিলিগুড়ি, ১৬ মার্চ#

দার্জিলিং এর চা বাগানের ছবি শমীক সরকারের তোলা।
দার্জিলিং মিরিক-এর চা বাগানের ছবি শমীক সরকারের তোলা।

বাগান ধুঁকছে, ভোট বয়কট করতে চায় বান্দাপানি চা-বাগানের শ্রমিকরা
বান্দাপানি চা বাগান বীরপাড়া মাদারিহাট ব্লকে অবস্থিত, বন্ধ ঢেকুয়াপাড়া চা বাগানের পাশে। এই বাগানটিও প্রায় বছর দেড়েক ধরে ধুঁকছে। এই বাগানের বেশিরভাগ শ্রমিক কাজের সন্ধানে বাইরে চলে গেছে। কেরল, ভূটান। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের কুড়িটার কাছাকাছি রেশন ডিউ রেখেছে। জ্বালানি কাঠ থেকে শুরু করে পিএফ গ্র্যাচুইটি বাকি রেখে দিয়েছে। একটা সময় এসে শ্রমিকরা বলেছিল, আর কাজ করব না। আর বাগানে থাকব না। বছরখানেক ধরে এই ব্যাপারটা চলছে।
গত সপ্তাহে ১৪ মার্চ একটা মিটিং হয়েছে বাগানে। ঠিক হয়েছে, ৩২০০ ভোটার ভোট বয়কট করছে। এক-দুদিন পরে বিজেপি প্রার্থী ও নেতারা আসেন। তাঁদেরকে বাগানের শ্রমিকরা তাড়িয়ে দেয়। বলে, আপনারা এর আগে কখনও আসেননি। এখন আর প্রয়োজন নেই। ফোনে একথা জানালেন রাজু থাপা। প্রসঙ্গত, রাজু গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা। এই চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে নেপালি ও আদিবাসী দুই-ই আছে। আদিবাসীদের মধ্যে রয়েছে ওঁড়াও, মুণ্ডা, মালপাহাড়ি।

বদ ম্যানেজারকে পুনর্বহাল করতে চায় মালিক, নারাজ শ্রমিকরা, ২ মাস বাগান বন্ধ
ইন্ডং চা বাগানে মনোজ সরকার নামে এক ম্যানেজার ২০১১ সালে একটি মেয়ের (বাগানের শ্রমিকের মেয়ে, ক্লাস ইলেভেনে পড়ত, চালসা গয়ানাথ স্কুল) সাথে খারাপ আচরণ করে। ফলে বাগানের শ্রমিকরা সেই ম্যানেজারকে বাগানছাড়া করে। কিন্তু ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে তাকে আবার বহাল করার চেষ্টা করছিল কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা বাধা দেয়। মালিকপক্ষ অনড় থাকে। এই বিরোধের জেরে গত ২ মাস ধরে বাগান বন্ধ। ১৪ মার্চ জিএলসি মিটিং ছিল। ফয়সালা হয়নি। মালিক বলেছে, হয় ওই ম্যানেজার ঢুকবে, অথবা সন্তোষ ভোক্তা, এতোয়া ভোক্তা — অর্থাৎ আন্দোলনকারী শ্রমিকদের নেতাদের সাসপেন্ড করব। শ্রমিকরা মানেনি। তাই এখনও বন্ধ এই বাগান। আনুমানিক আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করে এখানে। ২৬ মার্চ আবার জিএলসি মিটিং আছে।

মাধ্যমিক দিতে পারল না লুকসান চা-বাগানের শ্রমিক ঘরের ১৭ জন ছেলেমেয়ে
নাগরাকাটায় লুকসান বলে একটা চা বাগান আছে। সেখানে ১৭ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, চা-শ্রমিক ঘরের ছেলেমেয়ে, পরীক্ষা দিতে পারেনি। ওদের সিট পড়েছিল নাগরাকাটা লালবাহাদুর শাস্ত্রী হাইস্কুলে। বাসের ব্যবস্থা না করে ম্যানেজার ওদের জন্য ট্রাক্টর দিয়েছিল একটা। তার ডালাটি খুব খারাপ ছিল। ইংরেজি পরীক্ষা দিতে আসার সময় ওই ডালা খুলে ছাত্রছাত্রীরা আহত হয়। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে ভরতি করা হয় তাদের। শ্রমিকরা ওদের আরও কিছুদিন হাসপাতালে রাখার কথা বলে। কিন্তু ম্যানেজার অনিন্দ্য বাগচী তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায় বাগানে। শ্রমিকরা তখন বিক্ষোভ দেখায় মালিকের বিরুদ্ধে।

মালিকের স্ত্রীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ধর্মঘটে নামে তোর্সা চা বাগানের শ্রমিকরা
জয়গাঁ-র কাছে একটা চা বাগান আছে, নাম তোর্সা। মালিকের স্ত্রী রাজনন্দিনী পাতাসিয়া। তিনি একনায়ক টাইপের। কোনো শ্রমিক বাগানে ঢুকে তাকে যদি নমস্কার না করে, তাহলে তিনি ইচ্ছেমতো শ্রমিকদের সাসপেন্ড করে দিতেন। শ্রমিকরা কোনো কিছু বলতে পারত না। অতিষ্ঠ হয়ে শ্রমিকরা বাগানে ধর্মঘট করে মাস দুয়েক আগে। সেই ধর্মঘট চলছে। শিলিগুড়িতে জিএলসি মিটিং আছে ২১ মার্চ।