- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

টারবাইনের পাখা ভেঙে গেছে, বন্ধ হয়ে গেল কুদানকুলামের সতেরো হাজার কোটি টাকার চুল্লি

শমীক সরকার, কলকাতা, ২১ অক্টোবর#

কুদানকুলাম প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের চুল্লিটি প্রেসারাইজড ওয়াটার রিয়াক্টর ধরনের। ছবি উইকিপিডিয়া থেকে।
কুদানকুলাম প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের চুল্লিটি প্রেসারাইজড ওয়াটার রিয়াক্টর ধরনের। ছবি উইকিপিডিয়া থেকে।

১৫ মাস হয়ে গেছে, কুদানকুলাম পরমাণু প্রকল্পটির প্রথম ইউনিট চালু (ক্রিটিক্যালিটি) হয়েছে, এতদিন পরে বোঝা গেল, তার টারবাইনটি খারাপ। একটি ভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে (আইএএনএস) নাম গোপন রাখার শর্তে কুদানকুলাম পরমাণু প্রকল্পের একটি সূত্র ২০ অক্টোবর সোমবার জানিয়েছে, ‘প্রথম ইউনিটের টারবাইনটিতে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। মনে হচ্ছে টারবাইনের ভেতরের কিছু যন্ত্রাংশ খুলে গেছে এবং তা টারবাইনের ব্লেডগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে’। সূত্র থেকে আরো জানা গেছে, বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করছেন, প্রথম ইউনিটের টারবাইনের যন্ত্রাংশগুলিতে দ্বিতীয় ইউনিটের যন্ত্রাংশগুলি বসিয়ে দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে দেওয়া যায় কি না।
উল্লেখ্য, এই ইউনিটটি এই বছরের জুলাই মাসে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল (শাট ডাউন) রক্ষণাবেক্ষনের (মেইনটেনান্স) জন্য। সেপ্টেম্বর মাসে তা ফের চালু হওয়ার পরপরই, ২৬ সেপ্টেম্বর এটাকে ফের বন্ধ করে দেওয়া হয় টারবাইনের সমস্যার কারণে। এতদিন কোনো মিডিয়াতে এর কারণ সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কুদানকুলাম প্রকল্প কর্তৃপক্ষ, এনপিসিআইএল, ডিএই — কেউই টারবাইন তথা কুদানকুলাম পরমাণু প্রকল্পের অবস্থা নিয়ে স্পষ্ট কথা বলেননি।

পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রক বোর্ড টেস্ট করে শংসাপত্র দিয়েছিল
কুদানকুলাম পরমাণু প্রকল্পবিরোধী জন আন্দোলনের নেতা এস পি উদয়কুমার প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কয়েক মাস আগে এই ইউনিটে একটি ভালভ বিস্ফোরণ হয়েছিল এবং তাতে ছ’জন শ্রমিক আহত হয়েছিল। ঘটনা পরম্পরাতে স্পষ্ট হচ্ছে যে কুদানকুলাম পরমাণু প্রকল্পে খারাপ এবং নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (এইআরবি) নাকি খুব সতর্কভাবে প্রতিটি যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করে শংসাপত্র দিয়েছিল। তাহলে তারা টারবাইনের সমস্যা কেন ধরতে পারলো না। কী ধরনের পরীক্ষা করেছিল তারা? এই যদি তাদের দক্ষতার নমুনা হয়, তাহলে দক্ষিণ ভারতের আট কোটি তামিল এবং চার কোটি মালয়ালি কি করে তাদের হাতে নিজেদের নিরাপত্তা সঁপে দিয়ে শঙ্কামুক্ত থাকতে পারবে?’
উদয়কুমারের প্রশ্ন, কুদানকুলাম কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ডিজেল কেনা, বারবার দুর্ঘটনা, এবং যন্ত্রাংশের খারাপ হয়ে যাওয়ার যে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে প্রকল্পে, সে সম্পর্কে কিচ্ছু বলছে না কেন? প্রকল্পের ডিরেক্টর আর এস সুন্দরের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন তিনি। কারণ সুন্দর দেশের মানুষকে সত্যি কথা বলছেন না, কিন্তু তা বলা তাঁর কর্তব্য। যদি কুদানকুলামে একটা বড়োসরো দুর্ঘটনাও ঘটে যায়, তাহলেও তিনি একই কাজ করে যাবেন। তাঁর মতো লোকের হাতে একটি মেগা পরমাণু পার্কের দায়িত্ব তুলে দিয়ে কীভাবে আমরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারব, প্রশ্ন তুলেছেন উদয়কুমার।

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতও প্রশ্নের মুখে
দিন কয়েক আগেই কুদানকুলাম পরমাণু প্রকল্পের চুল্লি ডিজাইন ও যন্ত্রপাতির মূল অংশ যে দেশ থেকে আমদানি করা, সেই রাশিয়ার ভারতের রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দার কাদাকিন দাবি করেছিলেন, কুদানকুলাম পরমাণু প্রকল্প গোটা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ভালো এবং নিরাপদ পরমাণু প্রকল্প এবং তাঁর দেশ আরো বাইশটি চুল্লি ভারতকে বেচার পরিকল্পনা করেছে। উল্লেখ্য, এর আগে রাশিয়া চীন (তিয়ানওয়ান) ও ইরান (বুশেশর) -কে পরমাণু চুল্লি সরবরাহ করেছিল, সেগুলোর টারবাইনেও মারাত্মক সব সমস্যা ছিল। উদয়কুমারের দাবি, রাশিয়ার সরবরাহ করা টারবাইনে শুধু নয়, চুল্লির কোর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশও খারাপ।
উল্লেখ্য, কেবল পরমাণু নিয়ন্ত্রণ বোর্ড নয়, সুপ্রিম কোর্টও কুদানকুলাম প্রকল্পে নিরাপত্তার সিলমোহর দিয়েছিল এবং তার কমিশনিং স্থগিত রাখার আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল।