- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

জমি অধিগ্রহণে অস্বচ্ছতা আনার জন্য চটজলদি অর্ডিন্যান্স জারি হল

আমাদের দেশে একটা পুরোনো জমি অধিগ্রহণ আইন ছিল, জমি অধিগ্রহণ আইন ১৮৯৪। এই আইন প্রয়োগ করে জবরদস্তি জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে গত দুই দশক জুড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জন-প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আমাদের রাজ্যেও হরিপুর, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম সহ বিভিন্ন অঞ্চলে এই প্রতিরোধ আমরা দেখেছি। এই প্রতিরোধের সম্মিলিত চাপে দিল্লির সরকার জমি অধিগ্রহণের আইনে কিছু পরিবর্তন এনেছিল। অনেক আলাপ-আলোচনা-তর্কের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘সঠিক ক্ষতিপূরণ এবং জমি অধিগ্রহণ, স্থানান্তর ও পুনর্বাসনে স্বচ্ছতার অধিকার সংক্রান্ত আইন ২০১৩’ (The Right to Fair Compensation and Transparency in Land Acquisition, Rehabilitation and Resettlement Act 2013) এই আইনের নামের মধ্য দিয়েই সমস্যাগুলোর চরিত্র খানিকটা বোঝা যায়।
এখন দিল্লির সরকার তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্স জারি করার যুক্তি হিসেবে বলতে চাইছে যে ২০১৩ সালের আইনের ১০৫নং ধারার বিষয়গুলোর নিষ্পত্তির জন্যই নাকি তারা সংসদের আলোচনা এড়িয়ে এই কাণ্ডটা করেছে। ১০৫নং ধারায় রয়েছে জমিদাতা চাষিদের সম্মতির বিষয়। সরকারের মনোভাব হল, জমিদাতা চাষি ক্ষতিপূরণ পেলেই তো হল! কিন্তু বিষয়টা এত সরল নয়। বাস্তবে এই ধারাটির পরিবর্তনের ফলাফল ভয়াবহ হবে। কারণ আমরা দেখেছি, শিল্পপতি বা সরকার জমি দখল করে নিলে শুধু জমির মালিকই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। একই সঙ্গে ভাগচাষি, বর্গাদার, খেতমজুর, সন্নিহিত অঞ্চলের দোকানদার, হকার এবং বিভিন্ন ধরনের খেটে খাওয়া মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হয়। অনেক সময় জমির মালিকের চেয়ে এদের দুর্দশাই ভয়ানক হয়ে ওঠে।
সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছিলাম এই সমস্ত স্তরের খেটে খাওয়া মানুষ প্রতিরোধে জড়ো হয়েছিল। একদিন হঠাৎ মমতা ব্যানার্জি হাজির হলেন সটান জ্যোতি বসুর সল্টলেকের বাসায়। সেখানে গিয়ে বললেন যে তিনি জমি দিতে ‘অনিচ্ছুক চাষিদের’ বিষয়টার শুধু নিষ্পত্তি চান, টাটার জমি দখল নিয়ে তাঁর কোনো বিরোধ নেই। অর্থাৎ এইভাবে তিনি আন্দোলনে শামিল এক বিশাল সংখ্যক খেটে খাওয়া মানুষের অধিকারকে ছেঁটে দিতে চাইলেন।
আজও নরেন্দ্র মোদি এই অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে ওই ধরনের একটা চালাকি করতে চাইছেন গ্রামের এক বিপুল সংখ্যক মানুষের সঙ্গে, যারা জমির মালিক নয়, কিন্তু জমির সঙ্গে যাদের জীবন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে; যারা একটা গাছ পাখি পাথর বা টিলার মতো প্রকৃতি-পরিবেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে রয়েছে; যাদের ক্ষতির কোনো পূরণ হয় না। চাষির প্রতি কৃত্রিম দরদ দেখিয়ে প্রকৃতির এই সন্তানদের ভাতে মারতে চাইছে নয়া অর্ডিন্যান্স।