- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘চৌরারিয়ার ধান্দা লোহা বিক্রি করা’

২৭ জুন, রমজান আলী, নিউ সেন্ট্রাল জুট মিল#

নিউ সেন্ট্রাল জুট মিলের পরিত্যক্ত ফাউন্ড্রি শপের চালার লোহা অবধি খুলে বিক্রি করে দিয়েছে। ছবি জিতেন নন্দীর তোলা, ২৭ জুন
নিউ সেন্ট্রাল জুট মিলের পরিত্যক্ত ফাউন্ড্রি শপের চালার লোহা অবধি খুলে বিক্রি করে দিয়েছে। ছবি জিতেন নন্দীর তোলা, ২৭ জুন

শুনুন ৫২\% আমরা আছি, শ্রমিক। ৪২\% সরকার আছে। তাহলে এই বি জি বিড়লা তিন-চারমাস চালিয়ে কী করে মিলটা জব্দ করতে চাইছে? আমাদের মিল সরকারের মিল, কী করে ও নিজের হাতে নেবে? প্লাস্টিকের মেশিন এনে লোহার মেশিন তুলে নিয়ে যাবে, এটা তো কখনও হতেই পারে না। একটা মেশিন বসিয়ে পাঁচটা মেশিন তুলবেন, এ তো হতেই পারে না। এখানে তিনটে ডাইরেক্টর আছে। তারা কী করে এটা মানল যে মেশিন তুলে নেবে? পনেরোটা ইউনিয়নের মধ্যে দশটা ইউনিয়ন সই করেছে, পাঁচটা সই করেনি। এই দশটা ইউনিয়নের চামচা-বেলচাকে যখন মারা হয়েছে, তখন তারাই বলেছে যে বি জি বিড়লা আমাদের চার লাখ টাকা করে দিয়েছে বলে আমরা সই করেছি। এদের কেটে দেওয়া হবে না মেরে দেওয়া হবে? এই নেতাদের মেরে দেওয়া উচিত আছে না নেই? প্রথম নাম্বার টিএমসি সই করেছে। দ্বিতীয় নাম্বার করেছে সিপিএম। তারপর বিজেপি আছে। এরকম করে দশটা ইউনিয়ন সই করেছে। এই নেতারা সব কোম্পানির শ্রমিক। এরা চার লাখ টাকা করে নিয়ে সই করেছে, যা মেশিন আছে উপড়ে নাও। নতুন প্লাস্টিক মেশিন বসাবে, তার মধ্যে ৮৪টা স্পেন্ডেল আছে। বডিটা লোহার, বাদবাকি প্লাস্টিক। কী করে আপনি বসাবেন? আগুন লাগলে দশখানা পেনিয়ান পুড়ে যাবে। এখন আমার যে মেশিন আছে, যদি পুরো মেশিন পুড়ে যায়, আধঘণ্টার মধ্যে চালু হয়ে যাবে তেল-জল দিলে। আমার মেশিন নিয়ে গিয়ে তুমি নিজের মিলে বসাবে আর আমার মিলে প্লাস্টিকের মেশিন বসাবে, এ তো হতেই পারে না।
চৌরারিয়ার চারটে মিলে যান। গিয়ে দেখুন যে কী অবস্থা মিলের! সব মিলের লোহা গায়েব করে দিয়েছে। এখানে যখন ও এল, আমাদের নেতারা কী বুঝিয়েছে, ওর গাড়ি গাড়ি টাকা আছে। আই বি দত্তকে এই পনেরোটা ইউনিয়ন জোর করে তাড়িয়েছে। কিছু শ্রমিক ওদের সমর্থন দিয়েছে। আই বি দত্ত পিএফ দিয়েছে, গ্রাচুইটি দিয়েছে, ইএসআই দিয়েছে। কারেন্ট বিল পেমেন্ট করেছে, একটাও বিল বাকি রাখেনি। সমস্ত হপ্তা দিয়েছে। ওরকম একটা লোককে একটাও ইউনিয়ন সমর্থন করেনি। সে শুধু বলেছিল, এই নেতারা সব জালি লোক, এদের আমি রিটায়ার করে দেব। সেই জন্য এরা একে বাদ দিয়ে বি জি বিড়লাকে সমর্থন করেছে। শ্রমিকদের বলল, আমি মালিক আনছি। সেই মালিক আনার এই নতিজা। বলেছিল, গাড়ি গাড়ি টাকা আনছি এখানে ঢালব বলে। কী হল? এখন হপ্তা না হলে যা অবস্থা হবে। আমরা খেতে পারছি না। আর পনেরো দিন গেলে আমাদের বউ-ছেলেমেয়ের কী অবস্থা হবে আমরাই বুঝছি। কারেন্ট বিল জমা হবে না, এই ৩০ তারিখ গেলে ইএসআইয়ের পয়সা জমা হবে না, আমরা ছুটির পয়সা পাব না, হসপিটালে গেলে ট্রিটমেন্ট হবে না। আমরা কী খাব? কোথায় থাকব? বাথরুম, পায়খানা, নালা-টালা সব জল বন্ধ হয়ে যাবে। বলুন আপনি? এই নিউ সেন্ট্রাল জুটে যখন ট্রাস্টি ভোট হল, সাতটা সিট আমরা ওয়ার্কাররা টিএমসি-কে দিয়েছি। কী হল? এই সরকার চেঞ্জ হয়েছে? এই মিল কো-অপারেটিভ সিস্টেমে চলে। কো-অপারেটিভের কী অবস্থা? টাকা কাটা হচ্ছে, লোন পাওয়া যাবে না। কো-অপারেটিভের ডাইরেক্টর বোর্ড টিএমসি, পিএফ ট্রাস্টি বোর্ড টিএমসি। আই বি দত্ত যখন ছিল, পঞ্চাশটা এই মিলে আর পঞ্চাশটা ওই মিলে লোন দেওয়া হত, একদম কারেন্ট ছিল। বি জি বিড়লা যখন এল, কো-অপারেটিভের লোন বন্ধ হয়ে গেল। অনেক প্রেসার দেওয়ার পরে, কুড়িটা এই মিলে আর কুড়িটা ওই মিলে দিচ্ছে। একমাস দিচ্ছে, দু-মাস গায়েব। শুধু ধান্দা হচ্ছে লোহা বিক্রি করা। এই গোডাউনটা ছিল, পুরো ভেঙে মাঠ করে ফেলল। গঙ্গার ধারে দুখানা জেটি ছিল। বলল, জেটি তুলব। এখানে পুলিশ প্রশাসন আছে, সিকিউরিটি আছে, এরা থাকার পরেও চোরেরা ঢুকছে। তিনখানা চারখানা স্প্রিং থেকে ববিন কেরিয়ার চুরি হয়ে যাচ্ছে। এই তো আগের সপ্তাহে তিনদিন আগে চুরি হয়েছে। পিতলের মোটা মোটা ২২৪টা ববিন কেরিয়ার চুরি হয়ে গেছে।
আমি মিলে চাকরি করি। আমি সুইপারের কন্ট্রাক্টরও আছি। আমারও পাঁচখানা বিল বাকি আছে। আমি দুদিন থেকে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। লেবার অফিসারের প্রেসার, কাজ করতে হবে। পেমেন্ট না হলে আমি কী করে কাজ করব?
লেবার অফিসার আর পার্সোনাল অফিসারকে ওরা মার খাওয়ানোর জন্য রেখে দিয়েছে। মেইন মেইন যারা আছে, তারা পালিয়ে গেছে। আর ওদের বলবে, তুমি ফ্লোরে যাও, মার খাও! দুটো লেবার অফিসার আছে, একজনের ফ্যামিলি ছিল, এখন বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। একা থাকে। যদি খবর পায়, গঙ্গার ধার দিয়ে পালাবে।