- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

চীনের অট্টালিকা নগরী গঠনের বাধা ‘কাঁটাবাড়ি’র বাসিন্দারা আত্মঘাতের পথে

চীনের দক্ষিণদিকের সমুদ্র তীরবর্তী জেলা গুয়ানঝৌ-এর মফস্বল শহরগুলিতে আকাশচুম্বী বাড়ি হচ্ছে। বুলডোজার এসে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে পুরোনো ২-৩ তলা বাড়িগুলি। শহর ছেড়ে পালাচ্ছে সেখানকার পাঁচশো বছরের পুরোনো বাসিন্দারা। ২০১০ সালে চীনে অলিম্পিকের প্রাক্কালে চীন সরকার ঘোষণা করেছিল, এই জেলার ১০০টির বেশি শহর ও গ্রাম পুরো ভেঙে ফেলে ‘নগর পুনর্নির্মাণ’ করা হবে। ওই ৫৪০ বর্গ কিমি এলাকায় (আয়তনে আমাদের হাওড়া জেলার একের তিনভাগের বেশি) তৈরি হবে রিয়েল এস্টেট।
এরকমই একটি শহর ইয়াংজি। ৭০০ বছরের প্রাচীন এই শহরে পুরোনো বাড়ির ছড়াছড়ি। কিন্তু আকাশচুম্বি দানব-বাড়িগুলির তুলনায় এগুলিকে লিলিপুটের মতো লাগে। এই সব পুরোনো বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেখানকার পুরোনো বাসিন্দারা সরকারের কাছে অনেক আবেদন-নিবেদন করেছে। কিন্তু সেসব আবেদন-নিবেদনের নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই হংকং-এর ডেভেলপাররা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর। অনেকে আবেদন করেছে আরও বেশি ক্ষতিপূরণের জন্য, এই নগর পুনর্নির্মাণ পরিকল্পনা বানচাল করার জন্য। কিন্তু ডেভেলপারদের ভাড়া করা গুণ্ডারা ভয় দেখাচ্ছে, জল এবং বিদ্যুতের সরবরাহ কেটে দিচ্ছে। এদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে অনেক অধিবাসী চুক্তি সই করে ভেগে গেছে। কেবল টিঁকে আছে কিছু বাড়ি, যাদের বাসিন্দারা এই চাপ এবং সরকারি চাপের কাছে নতিস্বীকার করেনি এখনো। চীনের মিডিয়া এই বাড়িগুলির নাম দিয়েছে ‘কাঁটাবাড়ি’ — উন্নয়নের পথের কাঁটা। ধুলিসাৎ হয়ে যাওয়া বাড়িগুলির মাঝে এগুলিই এখন দাঁড়িয়ে।
কিছুদিন আগেই লি জিয়ে নামে বছর চল্লিশের এক মহিলা এরকমই একটি ফাঁকা পাঁচতলা বাড়ি, যা ভাঙনের অপেক্ষায় ছিল, তার ছাদে উঠে পড়েছিলেন। তাঁকে পরিবারের সবাই, বাড়ি ভাঙতে আসা লোকলস্কর এবং পুলিশ নামতে বললেও তিনি নামেননি। লাফিয়ে পড়েন পাঁচতলা থেকে এবং মারা যান। এবছর মার্চ মাসে, একটি কোর্টের নির্দেশে তাঁর বাড়ি ভাঙা পড়ে।
লি মারা যাওয়ার একদিন বাদেই রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা জিনহুয়া জানায়, ইউনান প্রদেশের বাওগুনাও গ্রামের এক মহিলা সেখানকার বাড়িভাঙা অফিসে গিয়ে নিজের গায়ে বাঁধা বিস্ফোরক ফাটিয়ে দেন। তিনি এবং ওই সংস্থার কর্মরত দুই কর্মী মারা যান।
উচ্ছেদ হতে বসা গ্রাম-শহরবাসী চীনে আত্মঘাত এবং আত্মঘাতী হামলার আশ্রয় নিচ্ছে।

কুশল বসু, কলকাতা, ১৫ মে, তথ্যসূত্র এবং ছবির সূত্র দি হিন্দু পত্রিকার ওয়েবসাইট