- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

চিকিৎসা মরীচিকা

স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশার কথা আমাদের কাগজে তো বটেই, বড়ো মিডিয়াতেও ঘুরে ফিরে আসে। কলকাতার তুলনায় মফস্‌সলে এই বেহাল দশা আরও প্রকট। প্রাইভেট নার্সিং হোম থেকে সরকারি হাসপাতাল, সব জায়গাতেই এই বেহাল দশা স্পষ্ট। রোগীর বা তাদের আত্মীয়-স্বজনের বয়ানে অসন্তোষের কথা আমরা শুনে থাকি। আমাদের কাগজে দুটি সংখ্যা জুড়ে আমরা সেই বেহাল দশার স্বীকারোক্তির কথা শুনলাম ডাক্তারদের কাছ থেকে, ‘স্বাস্থ্য পরিষেবার অযৌক্তিকতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে।
কীভাবে ডাক্তারদের কাটমানি, অ্যামবুলেন্স ড্রাইভারদের কাটমানি, রিকশাওয়ালার কাটমানি, ওষুধ কোম্পানির ওষুধ ঠিক করে দেওয়া থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তি ও ওষুধপত্র ব্যবহারের চাপ চিকিৎসার থেকে মানবিকতাকে বিযুক্ত করেছে — তা পরিষ্কার করে বলেছেন ডাক্তাররা।
ছত্তিশগড়ের শহীদ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত ডাক্তার বলেছেন, বিজ্ঞানসম্মত অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার সুযোগ সম্পূর্ণত তাঁরা নিতে পারেননি সেখানে। লোক-জ্ঞানের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।
প্রতিবেদনে বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার অযৌক্তিকতার কথা এসেছে। একজন বলে দিয়েছেন খেদের সঙ্গে, ‘মানুষের মধ্যে যৌক্তিকতা নেই, মানুষের চিন্তার মধ্যে যৌক্তিকতা নেই’।
কিন্তু সেটাই তো স্বাভাবিক। মরণাপন্ন আত্মীয়কে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া মানুষের কাছ থেকে যৌক্তিকতা আশা করা কি ন্যায্য? সেই মানুষটিকে কীভাবে বাঁচানো যায়, তার খোঁজ করাই তো স্বাভাবিক। আজীবনের বিজ্ঞানবাদী মানুষও ওই দশায় ঈশ্বরের স্মরণাপন্ন হয়। আধুনিক যৌক্তিক চিকিৎসাশাস্ত্র মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচানোর খোয়াব দেখিয়েছে, ঈশ্বরের হাতে ছাড়তে চায়নি। তাতে সে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার। যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার বদলে অর্ধ-ঐশ্বরিক সম্ভাবনার তত্ত্বের ওপর দাঁড়ানো ‘এভিডেন্স বেসড’ চিকিৎসার আশ্রয় নিতে হয়েছে। এই ব্যর্থতার সামনে না দাঁড়িয়ে অযৌক্তিকতাকে দোষারোপ করে কী লাভ?