- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

চার্জশিটে অভিযুক্তদের নাম নেই, জলা ভরাটের পাণ্ডা কর্পোরেট সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তই হয়নি: তপন দত্ত হত্যার তদন্তকারী সংস্থায় অনাস্থা জানাল পরিবার

পরিবেশ শহিদ তপন দত্ত হত্যার অনুসন্ধানে রাজ্য সরকারের অপরাধ তদন্ত বিভাগ গড়িমসি করছে বলে জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে এই অনুসন্ধানের ভার দেওয়ার দাবিতে হাইকোর্টে আপিল করলেন তপন দত্তের স্ত্রী প্রতিমা দত্ত। হাইকোর্ট এই মামলাটি গ্রহণ করে রাজ্য সরকারকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছে তাদের বক্তব্য জানানোর জন্য।
আবেদনে প্রতিমাদেবী জানিয়েছেন, হাওড়ার জয়পুর বিল ভরাটের বিরুদ্ধে তপন দত্ত যখন আন্দোলন শুরু করেন, তখন বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসের হাওড়া জেলার অনেক নেতা এবং সভাপতি অরূপ রায় তাঁর সাথে ছিলেন। এই বেআইনি জলা ভরাটের কাজে জমি হাঙরদের এক বড়োসড়ো সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। নাচার হয়ে তপন ২০০৯ সালে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন এই জলা ভরাট আটকাতে। জলা বোজাচ্ছিল যে কর্পোরেট রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলি, তাদের অন্যতম ণ্ণআনমোল’-এর অফিসে মামলার নোটিশ দিতে গিয়ে তপনবাবু দেখেন, সেখানে জেলা সভাপতি বসে আছেন। প্রশ্নের উত্তরে তিনি তপনবাবুকে জানান, আনমোল তাঁকে আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করেছে।
আবেদনটিতে প্রতিমাদেবী আরও বলেছেন, তাঁর স্বামীর খুনের ঘটনায় জড়িয়ে আছে হাওড়া জেলার অনেক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা — ষষ্ঠী গায়েন, অসিত গায়েন, কল্যাণ ঘোষ, গোবিন্দ হাজরা, অমিত পাল চৌধুরী, অজয় পাল চৌধুরী, মলয় দত্ত, পাচু বাগানি, লক্ষ্মীকান্ত হালদার, বাবু মণ্ডল, পরিতোষ বর, রমেশ মাহাত এবং তার সঙ্গীসাথীরা। এই খুনের ষড়যন্ত্রে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী অরূপ রায় সরাসরি যুক্ত বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিমাদেবী। কুখ্যাত অপরাধী রমেশ মাহাত এবং তার সঙ্গীসাথীরা মিলে ণ্ণগিল্ড’ নামক একটি সিন্ডিকেট বেআইনিভাবে তৈরি করে জলা বোজানোর কাজে যুক্ত হয়েছিল।
প্রতিমাদেবীর অভিযোগ, ২০১১ সালের ১৫ মার্চ পরিতোষ বর তপনবাবুর বাড়িতে আসেন রমেশ মাহাত-র ভাইকে নিয়ে এবং তাকে ২৫ লক্ষ টাকা ও কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট ঘুষ হিসেবে দিতে চান। তপনবাবু ঘুষ প্রত্যাখ্যান করেন এবং জলাবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। অবশেষে ৬ মে তিনি খুন হয়ে যান।

 

হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি ২৬ এপ্রিল জয়পুর বিল পরিদর্শন করে এসে জানিয়েছে, ওখানে জলা ভরাট হয়েছে। ভরাট হওয়া জমিতে হোসিয়ারি পার্কের উদ্বোধন করে এসেছেন শিল্পমন্ত্রী।
সিআইডি তদন্তের ভার নিয়ে ৩০ আগস্ট তড়িঘড়ি একটি চার্জশিট তৈরি করে। সেই চার্জশিটে রমেশ মাহাত, ষষ্ঠী গায়েন, অসিত গায়েন, সুভাষ ভৌমিক, এবং কার্তিক দাস-কে মূল অভিযুক্ত বলে বলা হয়। কিন্তু সেই চার্জশিটে মন্ত্রী অরূপ রায়ের নামোল্লেখ ছিল না। তবে ওই চার্জশিটে এই কথার উল্লেখ ছিল, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আনমোল সাউথ সিটি প্রজেক্ট-এর জন্য হাওড়ার সুতি ক্যানাল, হাড়াল ক্যানাল এবং আরও দুটি ক্যানালে ছাই ফেলা নিয়ে জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তপনবাবুর দীর্ঘ শত্রুতা ছিল। সিআইডি-র প্রাথমিক চার্জশিটে উল্লেখ ছিল, ণ্ণজলাভূমি বাঁচাও কমিটি’ গড়ে তপনবাবু জলা বাঁচাতে লড়ছিলেন এবং অর্থের টোপ এবং অন্যান্য কিছুর মধ্যেও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
প্রতিমাদেবীর আরও অভিযোগ, উক্ত প্রাথমিক চার্জশিটে এবং পরবর্তীতে আরও একটি চার্জশিটে সিআইডি যে এই সমস্ত জলাভূমি ভরাটের মূল হোতা, সেই ণ্ণবেঙ্গল আনমোল সাউথ সিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড’-এর কার্যকলাপের ব্যাপারে তদন্ত করেছে, তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। ণ্ণগিল্ড’ নামক সিন্ডিকেটের কার্যকলাপের বিষয়ে তদন্তের কোনো ছাপও ওই চার্জশিটে পাওয়া যায়নি।
হাইকোর্টে করা আবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, সিআইডি অভিযুক্তদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র দু-জনকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে বয়ান দিতে দেওয়া হয়েছে। এও বলা হয়েছে, ২০ মে ২০১১ অভিযুক্ত অরূপ রায় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরেই সিআইডি তদন্তে গাফিলতি করতে শুরু করেছে। আগস্ট মাসের চার্জশিটে যদিও বা অভিযুক্তদের নাম ছিল, ২০ সেপ্টেম্বর পেশ করা সিআইডি-র ‘সাপ্লিমেন্টারি’ চার্জশিটে সেইসব নামও বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই মামলা প্রসঙ্গে পরিবেশকর্মী কুণাল গুহ রায় বলেন, তদন্তের গাফিলতির দায় স্বরাষ্ট্র দফতর এড়িয়ে যেতে পারে না। অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়াটাও একটা বড়ো অপরাধ। ১৯৯৭ সালের পর আর কোনো পরিবেশকর্মীর পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আবেদন করা যায়নি বা হয়নি। পরিবেশকর্মীদের এতটাই আতঙ্কের মধ্যে কাজ করতে হয়।
সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, কলকাতা, ৩০ জুলাই