- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

চলে গেলেন মরিচঝাঁপি তথ্যচিত্রনির্মাতা তুষার ভট্টাচার্য

সংবাদমন্থন প্রতিবেদন। ২৯ জুলাই, ২০২০।#

গত ২১ জুলাই আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন তুষার ভট্টাচার্য- মরিচঝাঁপি নিয়ে যার ডকুমেন্টারি প্রথম নজর কাড়ে। জীবনের শেষ প্রান্তে উনি বোলপুর পাড়ি দিয়েছিলেন। স্বামী-স্ত্রী-কন্যা বোলপুরে থাকতেন। অসুস্থতার খবর পেয়ে ১৯ জুলাই বেলুড় শ্রমজীবি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে যায় বোলপুর। বেলুড় হাসপাতালে যখন আনা হয়, প্রেসার তখন ৬০/২০। ২১ তারিখ ভোর বেলায় তিনি প্রয়াত হন। বয়স হয়েছিল আনুমানিক ছেষট্টি। যৌবনে নকশাল আন্দোলনে যুক্ত হবার সময় জন্মপরিচয়পত্র ও অন্যান্য নথি পুড়িয়ে ফেলতে হয়েছিল।

তুষার ভট্টাচার্য্যের ফেসবুক ওয়াল থেকে পাওয়া ছবি

মন্থনের তরফ থেকে তুষার ভটচাজের স্ত্রী আলপনাদি’র সাথে কথা বলে কৃশানু মিত্র জানান, ১৯৯৫ সালের অক্টোবরে ওনাদের বিয়ে হয়। তার আগে টিভিতে, খবরের কাগজে ‘জয়ন্তী অভিযান’ নামের তথ্যচিত্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজ করার খবর অবশ্য জানতে পেরেছিলেন আলপনাদি। বিয়ের পরও গোমুখ অভিযানে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ‘আমরাও পারি’ তথ্যচিত্র বানান। কখনো এটিএন বাংলায় প্রবাহ, খোঁজখবরের মত ধারাবাহিকে, কখনো বেলুড় শ্রমজীবি হাসপাতালের শাখা হিসেবে আগরপাড়ায় শ্রমজীবি হাসপাতাল তৈরির চেষ্টায় তিনি বরাবর খেটে খাওয়া শ্রমিকশ্রেণির পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছেন। প্রথম জীবনে অতিবাম রাজনীতির সাথে যুক্ত হলেও পরবর্তী জীবনে তিনি দলীয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন ক্রমশ। ২০১১ এ কলকাতা টিভিতে তাঁর এক দশকের অনুসন্ধানের ফসল মরিচঝাঁপি’র তথ্যচিত্র দেখানো হয় টানা ১১ দিন। পরবর্তীতে কলকাতার ভারতসভা হলে মালকানগিরি থেকে সম্বর্ধনা ও প্রেস কনফারেন্সের জন্য হাজির হন ছিন্নমূল পরিবারের প্রতিনিধিরা।

আগরপাড়ার বিরাট পৈতৃক বাড়ি ও দোকানগুলি কখনো ভাড়া দিতে চাননি তুষার। প্রোমোটারদের জেদের কাছেও হার মানেননি। এই জায়গা জমি যাতে মানুষের কাজে লাগানো যায়, তাদের কর্মসংস্থানের উপায়ে ব্যবহৃত হয়, শেষ জীবনে সেই চেষ্টাই করছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বাড়ির পরিবেশ ও মূল্যবোধের সাথে জিহাদ করেই বড় হয়েছিলেন। বিয়ের বিজ্ঞাপনেও লিখেছিলেন, পাত্রী সরাসরি লিখুন, তারপরেই রবীন্দ্রনাথপ্রিয় আলপনাদি নিজে চিঠি লেখেন এবং সেযুগে নিজেই পাত্রের বাড়িঘর ইত্যাদি দেখে আসেন- স্মৃতিচারণায় উঠে আসছিল এমনই নানা কথাবার্তা। কানের সমস্যায় ভুগছিলেন বেশ কিছু বছর। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে হার্টের অসুখ বাসা বেঁধেছিল বুঝতে পারেননি কেউ। করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসা ও যোগাযোগ-ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ঠিকমত চিকিৎসা করাতে পারলেন না বলে আক্ষেপ করছিলেন বারবার তুষার ভট্টাচার্যের পরিজনেরা।