- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

গণহত্যার নায়ককে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা যায়?

এক কাশ্মীরি এই ছবিটি পাঠিয়েছিলেন কাশ্মির টাইমস-এর সম্পাদক বেদ ভাসিন-এর ফেসবুক দেওয়ালে।
এক কাশ্মীরি এই ছবিটি পাঠিয়েছিলেন কাশ্মির টাইমস-এর সম্পাদক বেদ ভাসিন-এর ফেসবুক দেওয়ালে।

গুজরাতের নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে দেশের কর্পোরেট শিল্পপতিরা। দেশের অর্থনীতিতে মন্দা দশা। বাজার মন্দা, বিক্রি নেই, তাই একের পর বড়ো বড়ো প্রকল্প রূপায়ণে গড়িমসি চলছে। ঘটা করে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সরকারি সিদ্ধান্তের পর মাস তিনেক কেটে গেলেও কেউ বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেখায়নি। তার ওপর কর্পোরেট জমি দখল, পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে দেশের শত শত জায়গায় লড়ছে গ্রাম শহরের মানুষ — এও এক বাধা! এই শত প্রতিকূলতায় গোটা দেশে কর্পোরেট পুঁজি যখন আপাতত খুঁড়িয়ে হাঁটছে, গুজরাতে কিন্তু তা দৌড়চ্ছে। একের পর এক প্রকল্প হচ্ছে — সৌরবিদ্যুৎ থেকে টাটা ন্যানো। লোকের ওজর আপত্তি দাবড়িয়ে দিয়ে, দু-দিন বাদে সেগুলো সমাজের কাজে লাগবে কিনা না ভেবে, মোদির সরকার একের পর এক কর্পোরেট প্রকল্প রূপায়ণে পয়সা আর পুলিশ নিয়ে শিল্পপতিদের পাশে দাঁড়িয়ে গেছে। এটারই মিডিয়ার দেওয়া নাম, ‘গুজরাতের আশ্চর্য্য বৃদ্ধির গল্প’। অবস্থা দেখে যারপরনাই আহ্লাদিত এক কর্পোরেট বস কিছুদিন আগে তো বলেই ফেলেছেন, ‘মোদি গুজরাতের মানুষকে কী ওষুধ খাইয়েছেন কে জানে, সবার মধ্যে উদ্যোগপতি হওয়ার বাসনা যেন টগবগ করে ফুটছে!’ বলাই বাহুল্য, এ গুজরাতের আসল ছবি নয়। পরিসংখ্যান নিয়ে কারবার যারা করে, তারাও বলছে, গুজরাতে ধনী গরিবের ফারাক দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। পেট পুরে খেতে পায় না, এমন মানুষের সংখ্যাও অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি। কিন্তু তাতে কর্পোরেটদের কিছু আসে যায় কি?
এই ঢক্কা নিনাদের আড়ালে মোদির আরেকটি রূপ চাপা পড়ে যাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদি ২০০২ সালের গুজরাত গণহত্যার অন্যতম নায়ক। সেই গণহত্যায় মারা গিয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। রাজ্য জুড়ে সংগঠিত হয়েছিল ধর্ষণ, সম্পত্তিহানি, ঘর পোড়ানো — আরও অনেক মানবতাবিরোধী অপরাধ। সেই অভিযোগগুলি থেকে মুক্তি পেতে সরকারি নথি লোপাট করা হয়েছে, জেল খাটিয়ে ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে আমলা বা পুলিশ অফিসারদের … গুজরাত গণহত্যার সার্বিক তদন্ত বা বিচার, কোনোটাই এখনও হয়নি। প্রতিবেশী বাংলাদেশে আজ ৪২ বছর বছর পরে গণহত্যাকারীদের আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে বিচার হচ্ছে, সর্বোচ্চ সাজা পাচ্ছে যারা, তাদের কেউ কেউ দেশের মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছিল কয়েক বছর আগে।
কাজির বিচারে দোষি সাব্যস্ত এখনও না হলেও, দেশ তথা বিশ্বের মানুষ জানে, মোদি গণহত্যার নায়ক। একজন গণহত্যাকারী, তা সে যে পার্টিরই হোক, দেশের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া যায়?