- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

খাদ্য আন্দোলনের শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠানে নয়া খাদ্য সুরক্ষা বিলের সমালোচনা

শমিত, হালিশহর, ৩১ আগস্ট#

khadyo

১৯৫৯ এর খাদ্য আন্দোলনের শহিদদের স্মরণ করলো হালিশহর শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সদস্যরা। আজ এই উপলক্ষ্যে বর্তমান খাদ্য সুরক্ষা বিল এবং সাধারণ মানুষের খাদ্যের নিশ্চয়তা — এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ দেবব্রত পাণ্ডা। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার স্বীকার করেছে, ৮২ কোটি মানুষ খাদ্য পায় না। সে জন্য অর্ডিনান্স জারি করেও খাদ্য সুরক্ষা বিল আনতে চাইছে তারা। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। চাল গম রাগি জোয়ার বাজরা মাথাপিছু পাঁচ কেজি করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে, তা আদপে কতটা কার্যকরী করা যাবে সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। খাদ্য বন্টনের ক্ষেত্রে সরকারি ব্যর্থতা আগের মতোই থাকবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
দেবব্রতবাবু বলেন, খাদ্য সুরক্ষা বিল প্রকাশের আগে পর্যন্ত আশি হাজার কোটি টাকা সরকার ভর্তুকি দিয়েছে। বিল পাশের পর, এক লক্ষ তিরিশ হাজার টাকা হবে, আসবে কোথা থেকে? বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির যা হার, এ ব্যাপারে কোনওরকম নিশ্চয়তা সরকার দিতে পারছে না। আর্থিক সংস্কার চালু হয়েছে ১৯৯১ সাল থেকে। প্রতিটি দশকে অর্থনৈতিক সংস্কার চলেছে। ১৯৮০-র দশকের গোড়ার দিক থেকে আইএমএফ-এর স্মরণাপন্ন হতে হয়েছিল ভারতকে। বর্তমানে যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, আবারও আইএমএফের কাছে হাত পাততে হবে ভারতবর্ষকে।
তাঁর কথায়, মোট জিডিপির সিংহভাগ রয়েছে ১০০টি ধনী মানুষের হাতে। মাহেন্দ্র গোষ্ঠীর সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, দেশের মোট অর্থের বড়ো অংশটাই রয়েছে কতিপয় ধনীর হাতে। মুকেশ আম্বানির হাতে রয়েছে দু-হাজার কোটি ডলার। এক লক্ষ তিরিশ হাজার কোটি টাকার মালিক সে নিজে। বর্তমানে খাদ্য সুরক্ষা আইনের মধ্যে দিয়ে যে খাদ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা চাল গম রাগি জোয়ার বাজরা। এই সমস্ত দানা শস্য খেলেই অপুষ্টি দূর হয় না। তার জন্য চাই পুষ্টিকর অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী। সে ব্যাপারে সরকারের কোনোরকম উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
দেবব্রতবাবু আরও বলেন, খাদ্য সুরক্ষা কথাটির আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত একটি অর্থ রয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন বা ফাউ-এর মতে, খাদ্য সুরক্ষার অর্থ হলো : যখন সব মানুষের বছরের যে কোনও সময় পর্যাপ্ত শস্য কেনার মতো আর্থিক সামাজিক এবং শারীরিক সক্ষমতা থাকবে, তখন বলা যাবে খাদ্য সুরক্ষা রয়েছে। এখানে খাদ্য মানে প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত খাদ্য, যা স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রয়োজন মেটাতে পারে। বর্তমান খাদ্য সুরক্ষা বিল এর কোনোটারই হদিশ দিচ্ছে না। অর্থনীতিবিদের অভিমত, খাদ্য সুরক্ষা বিল ‘পবিত্র বই’-এর মতো সরকারি মহাফেজখানাতে সুরক্ষিত থাকবে। বিরাশি কোটি মানুষ, অর্থাৎ দেশের সাতষট্টি শতাংশ জনতা সুরক্ষার আওতায় আসবে না।
আলোচনার আগে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী বিদ্যুৎ ভৌমিক ও নীতিশ রায়। মনোজ্ঞ আলোচনাটির পর নাটক পরিবেশিত হয়, ‘উচ্ছেদ’। হালিশহর শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সদস্যরা দেশের জল জমি পাহাড় বিক্রি করার যে চক্রান্ত, তার বিরুদ্ধে এই তথ্য নাটকটি অত্যন্ত বলিষ্ঠতার সঙ্গে উপস্থাপন করে। কাঁচরাপাড়া রেলওয়ে অডিটোরিয়াম, হাইন্ডমার্চে এই স্মরণানুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।