- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

ক্রিমিয়ার দখল নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব

কুশল বসু, কলকাতা, ১৬ মার্চ#

ক্রিমিয়ার কোরেজ। ছবি উইকিমিডিয়া থেকে।
ক্রিমিয়ার কোরেজ। ছবি উইকিমিডিয়া থেকে।

ইউক্রেনের দক্ষিণের শহর ক্রিমিয়ার দখল নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন বিবাদ তুঙ্গে পৌঁছেছে। বেশ কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভের পরিণতিতে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের রাশিয়া-ঘেঁষা রাষ্ট্রপতি ইয়ানুকোভিচের পতন হয়। প্রতিবাদীরা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ শহরের দখল নেয়। কিন্তু ইউক্রেনের রাশিয়া সংলগ্ন পূর্বভাগ এবং দক্ষিণভাগের মানুষ ইয়ানুকোভিচের প্রতি সমর্থন জানায়। রাশিয়া এই পরিবর্তনকে মেনে নেয়নি। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া শহরে ণ্ণরাশিয়ান জনগণ এবং মিলিটারির সুরক্ষা’র জন্য আর্মি মোতায়েন করে দেয়। এরই মধ্যে ইউক্রেনের নয়া শাসকরা একটি ডিক্রি জারি করে ইউক্রেনের সরকারি ভাষার তালিকা থেকে রাশিয়ানকে বাদ দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ক্রিমিয়ার ২০ লক্ষ লোকের মধ্যে অর্ধেকের বেশি রাশিয়ান, এক তৃতীয়াংশ ইউক্রেনিয়ান এবং বাকিরা তাতার। ক্রিমিয়ার স্থানীয় সরকার ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের শাসন থেকে কিছুটা স্বাধীন করার চেষ্টা করায় সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করেছিল এই তাতাররাই। স্তালিনের আমলে ১৯৪৪ সালে তাতারদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই ক্ষত থেকে তাতাররা এখনও রাশিয়া বিরোধী।
ক্রিমিয়াতে বেশ কয়েক হাজার রাশিয়ান সৈন্য সহ একটি জবরদস্ত রাশিয়ান আর্মি বেস রয়েছে, গত শতকের শেষের দিকের ইউক্রেন-রাশিয়া চুক্তি অনুসারে। এই আর্মি বেস থেকে দক্ষিণের কৃষ্ণসাগর সহ অতলান্তিক মহাসাগর অবধি রাশিয়া প্রভাব বজায় রাখে। ইউক্রেনে জন অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্টের পতনের পর রাশিয়া ভয় পেয়ে যায়, ক্রিমিয়ার সেনাঘাঁটিতে আগের আধিপত্যে বুঝি টান পড়ল। তাছাড়া ইউক্রেনে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের বিশাল ভাণ্ডার, যার একটা বড়ো অংশ রয়েছে ক্রিমিয়াতে ও ক্রিমিয়া সংলগ্ন সাগরে। এই ভাণ্ডারের ওপর আধিপত্য করা দরকার রাশিয়ার। তাছাড়া, গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপের গ্যাসের বাজারে রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় কর্পোরেট গ্যাজপ্রমের একাধিপত্যে বেশ কিছুটা ঘা দিয়েছে মার্কিন কর্পোরেট এক্সন ও শেভরণ। এইসব কারণেই ক্রিমিয়ায় সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে রাশিয়া — এরকমই মনে করে অনেকে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়ার ক্রিমিয়া আগ্রাসনের বিরোধিতা অনেকটাই এসব ছককে মাথায় রেখে। প্রসঙ্গত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং আমেরিকা রাশিয়ার নিন্দা করলেও চীন ও ভারত মোটামুটিভাবে রাশিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
১৬ মার্চ ক্রিমিয়াতে একটি গণভোট হয়, ক্রিমিয়া ইউক্রেনের মধ্যে থাকবে না রাশিয়াতে যুক্ত হবে, তা নিয়ে। এই গণভোটে সাতানব্বই শতাংশ ভোট পড়েছে রাশিয়ার মধ্যে যেতে চেয়ে।