- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

কোচবিহারে তিনটি জায়গায় জৈব চাষের পক্ষে সওয়াল

প্রশান্ত রায়, কোচবিহার, ৫ মে#

ওকরাবাড়ি আলাবক্স স্কুলে জৈব চাষ বিষয়ে আলোচনাসভায় স্থানীয় চাষিদের ভিড়ের ছবি অনুপম পালের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া।
ওকরাবাড়ি আলাবক্স স্কুলে জৈব চাষ বিষয়ে আলোচনাসভায় স্থানীয় চাষিদের ভিড়ের ছবি অনুপম পালের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া।

একচেটিয়া আগ্রাসন বিরোধী মঞ্চ, সংক্ষেপে ফামা এবং ওকরাবাড়ি আলাবক্স উচ্চ বিদ্যালয়ের যৌথ আয়োজনে বিদ্যালয় সভাঘরে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয় ৫ এপ্রিল। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জিন-বিজ্ঞানী তুষার চক্রবর্তী, কৃষি-বিজ্ঞানী অনুপম পাল ও চিকিৎসক সিদ্ধার্থ গুপ্ত। সেদিনের সভার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল বিটি বেগুনের চাষের ফলে মারণ রোগ ক্যানসার কীভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। বিজ্ঞানী তুষার চক্রবর্তী জানান যে বাংলাদেশ সরকার আমেরিকার মনসান্টো কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বিটি বেগুনের চাষ করাচ্ছে। বিপদের কথা হল, হাওয়ায় ও পতঙ্গের মধ্যে দিয়ে কাঁটাতারের বাধা পেরিয়ে ভারতীয় ফসলের সাথে পরাগ সংযোগ ঘটে যাবে বাংলাদেশের জিন মডিফায়েড ফসলের। ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতীয় চাষ। অন্যান্যদের আলোচনায় উঠে আসে কৃষিতে ব্যবহার্য কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মানব শরীরে ক্যানসার দানা বাঁধছে। এর ভয়াবহতা বোঝাতে যে তথ্য ওনারা দেন তা শিউরে ওঠার মতো। পাঞ্জাবে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের দলে প্রচুর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় যার ফল হিসেবে পাঞ্জাব থেকে প্রতি সপ্তাহে একটি ট্রেন ছাড়ে ক্যান্সার রোগীদের নিয়ে। ট্রেনটার নামই হয়ে গিয়েছে ক্যানসার এক্সপ্রেস।
সভায় চাষিরা শঙ্কিত হয়, প্রশ্ন করে, এর থেকে বাঁচার উপায় কি? কৃষি-বিজ্ঞানী অনুপম পাল বলেন, উপায় রাসায়নিক সার কীটনাশক বন্ধ করে জৈব চাষ করুন। কিছু চাষি প্রশ্ন করে, রাসায়নিক সার না দিলে তো ফলন বেশি হবে না। কিন্তু অনুপম পাল পাল্টা হিসেব করে দেখান যে জৈবচাষে ফলন কম হলেও খরচাও কম, সেদিক থেকে লাভ একই রকম থেকে যাচ্ছে। একজন চাষি মনোরঞ্জন অধিকারী প্রশ্ন করেন, ফলন কম হলে তো খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে, তখন কী হবে? ডাক্তার সিদ্ধার্থ গুপ্ত বলেন, আমাদের দেশে যা ফলন হয় তা আমাদের প্রয়োজন মিটিয়ে অনেক। কিন্তু এখানে বেশিরভাগ খাদ্য নষ্ট করা হয়। তাই সবাই যদি একই রকম চাষ না করে কেউ ধান কেউ সবজি এই ধরনের চাষ করেন যা আপনাদের গ্রামের প্রয়োজনেই লাগবে, তাহলে দেখবেন খাদ্যসঙ্কট দেখা দেবে না। এরকম অনেক প্রশ্নোত্তরের মধ্যে দিয়ে সভা শেষ হয়। সভা শেষে কয়েক জন চাষি মত প্রকাশ করলেন যে এতটুকু সভা ঘরে এই আলোচনার বদলে তারা চায় কোনো মাঠে বড়ো করে সভা হোক পরবর্তীতে। যাতে করে আরও অন্যান্য কৃষকেরাও সচেতন হতে পারে।
সেদিন আরও দুটি পথসভা হয় একই বিষয়েই। প্রথমটি নাজিরহাট চকবাজারে ও দ্বিতীয়টি শালমারা বাজার মুক্ত মঞ্চে। পথসভা দুটিতেও কৃষকদের ভালো সাড়া পাওয়া যায়। নাজির হাটে একজন মাছ ব্যবসায়ী সভা শেষে সকলকে জানান তিনি জৈব সার দিয়ে কিছু সবজি চাষ করেছেন, সকলকে অনুরোধ করেন, অল্প কিছু করে সবাই যেন তার সেই সবজি নিয়ে এসে খান এবং তার স্বাদ ও সৌন্দর্য কেমন তা অনুভব করেন।
শালমারায় দু-জন চাষির বক্তব্য যে তারা চাষের খরচ বহন করতে করতে হতাশ হয়ে পড়েছে। তারা কখনোই ভাবতে পারেনি যে জৈব চাষ করলে খরচ কমবে ফসলও হবে।