- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

কেশ্ববেশর মন্দির ও ধন্বন্তরী কালী মন্দির

দীপংকর সরকার, ঢাকুরিয়া ইস্ট রোড, কল-৭৮, ১৮ মার্চ। সঙ্গের ছবি লেখকের তোলা। #

ধ্বন্বন্তরী মন্দির, মজিলপুর
ধন্বন্তরী মন্দির, মজিলপুর
আড়াইশো বছরের পুরনো কেশবেশ্বরের মন্দির, বিজয়গঞ্জ বাজার
আড়াইশো বছরের পুরনো কেশবেশ্বরের মন্দির, বিজয়গঞ্জ বাজার

কলিকাতা থেকে ৭০ কিমি দূরত্বে লক্ষ্মীকান্তপুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা। ২ ডিসেম্বর ২০১২ রবিবার ভোরবেলা  ঢাকুরিয়া  থেকে নামখানা লোকালে উঠে বসলাম ৫-১৭ মিনিটে, জয়নগর মজিলপুরে নেমে ধন্বন্তরী কালীমন্দির যাওয়ার জন্য। অত শীতের সকালেও ভালোই ভিড় ছিল।
লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশনে নেমে, কিছুদূত হেঁটে ডানদিকে অটো স্ট্যান্ডের দিকে গেলাম। সেখান থেকে রামগঙ্গার বাস যাচ্ছে। যাচ্ছে ডায়মন্ড হারবার যাওয়ার বাস। পাথর প্রতিমা সযাওয়ার বাস যাচ্ছে। অটোতে উঠে জিজ্ঞাসা করলাম, মন্দিরবাজার যাবে। বলল, যাবে। জায়গাটা বিজয়গঞ্জ। সেখানে একটি বাজার আছে। বাজারের পাশেই কেশবেশ্বরের (শিব) মন্দির। বাংলা ১১৫৫ সনে স্থাপিত হয় পাড়দাহ নিবাসী কেশবচন্দ্র রায়চৌধুরী দ্বারা। জনগণের সাহায্যে ও তারাপদ রায়, ধীরেন্দ্রনাথ পুরকাইতদের সহযোগিতায় ১৩৫৬ সালে সংস্কার হয় এটি। সংস্কার সমিতির অর্থসহযোগীতায়। উদ্যোক্তা মদন হালদার, সুখবিলাস মন্ডল। অটোস্ট্যান্ডের পাশেই কেশবেশ্বরের মন্দির। মন্দিরের ভূগর্ভ অংশ অনেকটা বসে গিয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে অনেকটা উঁচুতে উঠতে হয়। তিনদিক খোলা মন্দির, তিনদিক দিয়ে ক্যামেরায় ছবি তুললাম। মন্দিরের সামনে তিনটি মুখখোলা। চারচালা মদির। কারুকার্য করা। ওপরে চূড়া আছে। মন্দিরের সামনে বাজার বসে। মন্দিরের পাশ দিয়ে রাস্তা লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশন পর্যন্ত গেছে। একটু ঘুরে ঘুরে দেখে অটোতে উঠে স্টেশনে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর জয়নগর স্টেশনে নামলাম। স্টেশন থেকে বেরিয়ে দেখলাম দু-ধারে সব জয়নগরের মোয়ার দোকানের সারি। সেসব পেরিয়ে চলমান পথচারীকে জিজ্ঞাসা করলাম। ধন্বন্তরী কালীমন্দির কিভাবে যাব। স্থানীয়রা বলল, সাইকেল ভ্যানে চেপে যান। ৫-৭ মিনিটে সাইকেল ভ্যানে চেপে বসলাম। মিনিট ৫ এর পরে একটা রাস্তার মোড়ে নামলাম। সেখান থেকে বাঁদিকে ৭ নং ধন্বন্তরী রোড, মজিলপুর পৌঁছলাম। পৌঁছে দেখলাম ডানদিকে সবুজ রং-এর দোচালা টিনের ছাউনি যুক্ত প্রশস্ত প্রাঙ্গন। সেখানে ভক্তরা আসেন পূজার সময়। মূল মন্দির টিনের ছাউনির পেছনে। সবদিক দিয়েই মূল মন্দিরে প্রবেশ করা যায়। তিনটি প্রকোষ্ঠ আছে। ধন্বন্তরী কালীমূর্ত্তি মাঝখানে। ছোট্ট চারহাত কাপড় পরানো শ্যামা মূর্ত্তি। চতুর্ভূজা শ্যামারূপী পটলচেরা চোখ, দেবির পদতলে শিব। কাপড় খুব সুন্দর করে পড়ানো। সুন্দর টান টান চোখ। অপূর্ব খুব ছোট্ট শ্যামামূর্ত্তি যা এককথায় নয়ন সার্থক। মজিলপুর নিবাসী যদুগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় এর পরমারাধ্যা মাতাঠাকুরানী অন্নপূর্ণা দেবী ১৩৪৫ সালে স্থাপন করেছিলেন। নিয়মিত এখানে পূজারীরা পূজা করেন। প্রধান পূজারী পূজা করার সময় আমি চতুর্ভূজা শ্যামারূপীর ছবি তুললাম। ছবি তোলার সামান্য ব্দে অর্থাৎ পূজারীর মাথার পেছনে, পূজারী একটূ ঘাড় ঘুরিয়ে বিরক্ত হলেন। একজন সহকারী সাধক এসে বললেন এই মন্দিরের ‘মহাশক্তি মাদুলীর সর্ব্বরোগহরা ও সর্ব্ব কার্যসিদ্ধ প্রদান’ গুণাগুণের বিবরণ। এই ‘মাদুলি ধারণ করিলে ও কঠোর নিয়মাবলী মানিলে বাতের ব্যাথার উপশম হয়’। এক একটা প্যাকেটে তিনটাকা। মন্দিরের পাশের ঘর থেকে পাওয়া যায়। আমি দু-টি প্যাকেট কিনলাম। প্যাকেটের সাথে ‘নিয়ম মানিয়া চলার নির্দ্দেশ’ আছে। মন্দিরের সামনে রাস্তার উল্টোদিকে একটি সিঁড়ি ঘাট বাঁধানো। চারিদিকে গাছপালা সমৃদ্ধ পুকুর। চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখলাম ও বিভিন্ন দিক থেকে ছবি তুললাম।
দক্ষিণ ২৪ পরগণায় এরকম আরও অনেক মন্দির আছে। যেগুলি এখনও অজানা ও অচেনা রয়েছে। যেগুলির দর্শনের আশায় রইলাম।