- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

কেন গোপন

সারদা কেলেঙ্কারিতে রাজ্যের মন্ত্রী মহোদয় মদন মিত্র সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরপরই এক টিভি সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর অধিকর্তা অনিল সিনহা বলেছেন, ‘আমি একান্তভাবেই বিশ্বাস করি যে তদন্ত সম্পর্কে খুব সামান্য তথ্যই জনসাধারণের দরবারে থাকা উচিত।’

কিছুদিন আগেই সিবিআই-এর বিদায়ী অধিকর্তা রঞ্জিত সিনহার নাম সংবাদের শিরোনামে এসেছিল। টু-জি এবং কয়লা কেলেঙ্কারি, যেগুলোর দায়িত্ব ছিল সিবিআই-এর হাতে, তাতে অভিযুক্ত বেশ কিছু হোমড়াচোমড়া রঞ্জিত সিনহার সঙ্গে দেখা করেছিল। অধিকর্তার বাড়ির ‘গেস্ট বুক’ বা অতিথি খাতা থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়। এই নথিটি সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা মাত্র সিবিআই এটিকে গোপন নথি হিসেবে দাবি করে এবং এটি যারা প্রকাশ্যে এনেছে তাদের শাস্তি দাবি করে। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য সিবিআই-এর কথা শোনেনি। তদন্তকারী সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখার স্বার্থে রঞ্জিত সিনহার বিদায়ের মাধ্যমেই ওই ব্যাপারে ইতি টানা হয়েছিল। আর বেশি খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়নি।

কয়েক বছর আগে কেন্দ্রে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার গঠনের পরপরই প্রকাশ্যে আসে নীরা রাদিয়া টেপ। তাতে দেখা যায়, টাটা আম্বানির মতো শিল্পপতি থেকে শুরু করে বরখা দত্তের মতো বাঘা সাংবাদিক — রাজনীতির মহলের বাইরেও অনেকেই জড়িত আছে কর্পোরেট স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের ভাগ বাঁটোয়ারাতে। এই টেপ প্রকাশ্যে আসার পরই রতন টাটা আদালতে যান, দাবি করেন, এই টেপ প্রকাশ্যে আসায় তার ‘ব্যক্তিগত গোপনীয়তা’ হানি ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে ধামাচাপা দেওয়া হয় নীরা রাদিয়া টেপ কাণ্ড। আজ পর্যন্ত তার হকিকত জনসাধারণের দরবারে আসেনি।

বিদেশের ব্যাঙ্কগুলিতে ‘কালো টাকা’ কারা সঞ্চয় করে রেখেছে, তাদের নাম প্রকাশ্যে আনবে কথা দিয়ে অন্তত দু-টি দল গত লোকসভা নির্বাচনে লড়েছিল। ওই দুই দলের একটি বিজেপি আজ কেন্দ্রীয় সরকারের একচ্ছত্র ক্ষমতায়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দু-চারটি নাম প্রকাশ হয়েছে। তারপরই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাকি নাম আপাতত প্রকাশ করা হবে না। ওই ‘কালো টাকা’ দেশে ফিরিয়ে আনার মধ্যেই রাজনীতির বিতর্ক এখন কেন্দ্রীভূত, কিন্তু নামগুলো প্রকাশ্যে আনার ব্যাপারে কারোরই আর হেলদোল নেই।
কিন্তু সরকারি তথ্য জনসাধারণের দরবারে আনতে এই অনীহা কেন? কেন কেলেঙ্কারি ও তার তদন্তের প্রক্রিয়া এত গোপন? তদন্তগুলো তো প্রাইভেট নয়, ওগুলো তো জনসাধারণের টাকাতেই হচ্ছে। রাজনীতি, কর্পোরেট, প্রশাসনের তালেবড় — তারা তো পাবলিক ফিগার — তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হবে? এই গোপনীয়তার মাধ্যমে কী আড়াল করা হচ্ছে?