- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

দুবরাজপুরের দশটি মৌজায় বেআইনিভাবে কয়লা উত্তোলন করতে চাইছে এমটা

দাবিসমূহ
@ জমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জমির দাম পুনর্নির্ধারণ করতে হবে;
@ জমির মালিক, পাট্টাদার, ভাগচাষি সহ জমিকেন্দ্রিক জীবিকায় যুক্ত সকল মানুষের জীবিকা ও পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা দিতে হবে;
@ একফসলি, দুফসলি, ডাঙাজমির দাম দুভাবে নির্ধারণ করা যাবে না। যেহেতু মাটির তলায় কয়লা পাওয়া গেছে, তাই নীতিনিষ্ঠ মূল্য নির্ধারণ করতে হবে;
@ এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন তথা সমগ্র প্রকল্প সম্পর্কে সমস্ত তথ্য সরকারকে গ্রামবাসীদের জানাতে হবে;

সুনীল সোরেন, সিউড়ি, ১৪ নভেম্বর#

বীরভূম জেলার দুবরাজপুর ব্লকের লোবা পঞ্চায়েত এলাকায় মাটির নিচে উচ্চমানের মূল্যবান কয়লা পাওয়া গেছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনের ভিত্তিতে ডিভিসি (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন) এই কয়লা উত্তোলন করবে ‘এমটা’ কোম্পানির মাধ্যমে। খোলামুখ খনি খনন করে কয়লা সংগরহের জন্য প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘খাগড়া-জয়দেব ক্যাপটিভ খনি প্রকল্প’। খোলামুখ খনির জন্য লোবা, পলাশডাঙা, বরালি, ঘোগা, জোপলাই, খোজ কমলপুর, ঝিরুল, নীলভদ্রপুর, দেবীপুর ও কমলপুর মৌজার আনুমানিক ৩৩৫৩ একর জমিতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা।

ইতিমধ্যে এই গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা ছাড়াই খোলামুখ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে দেখে জমির মালিক, পাট্টাদার, ভাগচাষি ও খেতমজুর সকলেই একত্রিত হয়। এইভাবেই ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’র উদ্ভব হয়। আজ পর্যন্ত জমির মালিকেরা জানে না যে জমির কী দাম স্থির করা হয়েছে। স্থানীয় মানুষ মনে করছে, স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষকে নিয়ে জলের দরে জমি কেনার চেষ্টা করছে এমটা কোম্পানি। বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জমি এইভাবে সংগ্রহ হয়ে যাওয়ার পর ১৪ অক্টোবর ২০১১ তারিখ পলাশডাঙা মৌজায় এক টুকরো জমিতে খননকাজ শুরু করে বেঙ্গল এমটা কোম্পানি। জমি চিহ্নিত না করে এই খননকাজ শুরু হলে গ্রামবাসীরা সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে আপত্তি জানায়।

শুধু বেআইনিভাবে খননকাজই নয়, মাটি কেটে হিংলো নদীতে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে এক বিরাট অংশের জলপ্লাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করে গ্রামবাসীরা। বেআইনিভাবে নদী ভরাট করার বিরুদ্ধে সরকারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। কিন্তু গ্রামের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করার ব্যাপারে রাজ্য সরকার এপর্যন্ত কোনো ভূমিকাই নেয়নি।

এই পরিস্থিতিতে দ্রুতগতিতে খননকাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১৮ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখ গভীর রাতে বেঙ্গল এমটা কোম্পানি মাটি কাটার বৃহৎ যন্ত্র ঢোকাবার চেষ্টা করে। ১৯ ডিসেম্বর গ্রামবাসীরা একে একে জড়ো হয়ে মেশিনগুলো দেখতে পায়। সকলের নজর এড়িয়ে এইভাবে বড়ো আকারে খননকাজ শুরুর উদ্যোগ দেখে গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়। প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনার জন্য কৃষিজমি রক্ষা কমিটি সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি আধিকারিকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানায় ১৯ ডিসেম্বর। এরপর ওইসব মৌজার মানুষ কৃষিজমি রক্ষা কমিটির নেতৃত্বে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে আসছে। ২২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সিউড়ি সদরে একটি সভা হয়। সেখানে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি প্রস্তাব নেওয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।

যথাযথ আলোচনা করে খোলামুখ প্রকল্প বাস্তবায়িত করার জন্য একাধিকবার গ্রামবাসীরা মহাকরণে চিঠি দিয়েছে। তাদের দাবিদাওয়ার মধ্যে অন্যতম হল,

১। জমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জমির দাম পুনর্নির্ধারণ করতে হবে;

২। জমির মালিক, পাট্টাদার, ভাগচাষি সহ জমিকেন্দ্রিক জীবিকায় যুক্ত সকল মানুষের জীবিকা ও পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা দিতে হবে;

৩। একফসলি, দুফসলি, ডাঙাজমির দাম দুভাবে নির্ধারণ করা যাবে না। যেহেতু মাটির তলায় কয়লা পাওয়া গেছে, তাই নীতিনিষ্ঠ মূল্য নির্ধারণ করতে হবে;

৪। এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন তথা সমগ্র প্রকল্প সম্পর্কে সমস্ত তথ্য সরকারকে গ্রামবাসীদের জানাতে হবে; ইত্যাদি। এছাড়া, শুধু দশটি মৌজাই নয়, আশপাশের এলাকা সহ সমগ্র এলাকার পরিবেশের বিষয়টাকেও প্রকল্প রূপায়নের সাথে সাথে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।