- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

কেদারনাথের বিপর্যয়

হড়পা বান আর ভূমিধস উত্তরাখণ্ডে হাজার হাজার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, যাদের অনেকেই পর্যটক। কেদারনাথের স্বজন হারানো হাহাকার নিয়ে বেঁচে ফেরা মানুষদের মধ্যে আলিগড়ের হরি ওম বর্মা একজন। তিনি তাঁর বিয়োগান্তক দুঃখের কথা বর্ণনা করছিলেন আইবিএন লাইভ টিভিতে, ২৪ জুন#

১৩০ বছর আগের কেদারনাথ ধাম। ছবিটি ফেসবুকে পাওয়া।
১৩০ বছর আগের কেদারনাথ ধাম। ছবিটি ফেসবুকে পাওয়া।

আমি আমার স্ত্রী রেশমি, দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে চারধাম যাত্রায় বেরিয়ে পড়েছিলাম। আমাদের সাথে আরও আটজন প্রতিবেশী ছিল। রবিবার ১৬ জুন সকাল দশটার দিকে কেদারনাথ মন্দিরে গিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা ধরে পুজো দিই। পুজো শেষ করে আমরা দুপুর বারোটার দিকে বেরিয়ে আসি। তখনই আমরা প্রচুর ভূমিধস আর জলপ্রবাহ পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসতে দেখি। আমরা আর রাস্তায় বেরিয়ে বিপদ ডেকে আনতে চাইনি। তাই কেদারনাথের আগ্রা ধর্মশালায় রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিই।
রবিবার রাতে আমরা বারবার ঠাকুরকে ডাকছিলাম। রাতে তেমন কিছুই ঘটল না। সোমবার সকাল সাতটার দিকে মানুষের আর্তচিৎকারে আমাদের ঘুম ভেঙে গেল। জলপ্রলয় জলপ্রলয় বলে চিৎকার করে মানুষ এলোপাথাড়ি ছুটছিল। আমরা যখন বাইরে বের হলাম, তখন দেখি পুরো কেদারনাথ টাউন বন্যাপ্লাবিত। আমরা দ্রুত ধর্মশালার একতলা থেকে দোতলায় উঠে গেলাম। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে জল দোতলায় ঢুকে পড়ল। খুব তাড়াতাড়ি আমরা তিনতলায় উঠে এলাম। বিল্ডিংটি তিনতলাই ছিল। আমাদের আর ওপরে উঠে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রইল না। মৃত্যু আমাদের শরীরে জড়িয়ে গিয়েছিল। আমরা বাবা ভোলেনাথকে ডাকতে থাকলাম। হায় এখানেও জলে থইথই। হঠাৎ আমাদের পায়ের তলা থেকে একটা বিকট আওয়াজ শুনতে পেলাম। মুহূর্তের মধ্যে তিনতলা বাড়িটা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। নিমেষে আমার পরিবারের সদস্যরা বাড়িটার তলে চাপা পড়ে গেল। আমার স্ত্রী রেশমি, বড়ো ছেলে আমন, ছোটো ছেলে কৃষ্ণ এবং মেয়ে মেঘনা একেবারে ধ্বংসস্তূপে হারিয়ে গেল। আমার প্রতিবেশীদেরও দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমি আংশিকভাবে একটা বড়ো পিলারের নিচে পড়লাম। হঠাৎ দেখি আমার ভাগনা শুভম আমাকে পিলারের নিচ থেকে টেনে বের করল। বেরিয়ে আমার ছেলে আমনকে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে কিছুটা ওপরে খুঁজে পেলাম। আমি আর শুভম আমনকে টেনে বের করলাম। আমন জীবিত। কিন্তু আশঙ্কাজনকভাবে। আমার হাতের ওপর ওর শরীরটাকে এলিয়ে ধরলাম। কিন্তু খুব অসহায়ভাবে। তিনঘন্টা ওকে আমি আমার আবেগ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করলাম। হায়। আমার হাতের ওপরই ও মারা গেল।
যারা বেঁচে ছিল, তারা মৃত প্রিয়জনদের অনেক কষ্টে ফেলে রেখে নিরাপদ জায়গায় যাচ্ছিল। আমি আমনের দেহটাকে লেপে মুড়িয়ে একটি ধর্মশালায় রেখে এলাম। ভাবলাম পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে ফিরে ওর দেহের সৎকার করব।
কেদারনাথের চারদিকে শুধু থেঁতলানো মৃতদেহ। কেউ গুরুতর আহত অবস্থায় অসহায়ের মতো কাতরাচ্ছে। কেউ প্রিয়জনকে কেঁদে কেঁদে খুঁজে যাচ্ছে। কেউ প্রিয়জনের ব্যথায় অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রলাপ বকে বকে কাঁদছে।