- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘কলকাতার মতো দূষিত শহরে থেকেও কোনোরকম ওষুধ ছাড়া রোগ নিরাময় সম্ভব’

শমীক সরকার, কলকাতা, ২৮ মার্চ#

আর্থকেয়ার বুকস্‌-এ জন ফিল্ডার এবং বিনীতা মনসাতা।
আর্থকেয়ার বুকস্‌-এ জন ফিল্ডার এবং বিনীতা মনসাতা।

২৮ মার্চ কলকাতার আর্থকেয়ার বুকস্‌-এ এসেছিলেন জন ফিল্ডার, আর তার কথা শুনতে এসেছিলেন কুড়ি পঁচিশ জন। জন ফিল্ডার থাকেন অস্ট্রেলিয়ার কুইনসল্যান্ড-এ। সেখানে ৩০০ একর জায়গা জুড়ে একটি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ক্রনিক বা লেগে থাকা রোগের নিরাময় করা হয় প্রাকৃতিক উপায়ে। তবে প্রাকৃতিক চিকিৎসা মানে আয়ুর্বেদ বা অন্য কোনো বিকল্প চিকিৎসা নয়। ফিল্ডারের স্লোগান, ‘বিকল্প ওষধি নয়, ওষধির বিকল্প’। ফিল্ডার পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে কোনো ওষুধ খাননি। এদিনের আলোচনায় ফিল্ডার বারবার বললেন, কোনো তত্ত্ব নয়, আমি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা এবং আমার হাতে মানুষের রোগ নিরাময়ের অভিজ্ঞতা থেকে কথাগুলো বলছি। নানা উদাহরণ এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার ডালি সাজিয়ে তিনি রোগ নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায়গুলির কথা তুলে ধরলেন। উঠে এল কাঁচা খাবার দাবার খাওয়ার কথা, ভেগান খাদ্যের (শাকাহার এবং একইসাথে দুধ এবং তেল না খাওয়া) সীমাবদ্ধতার কথা। ফিল্ডার জানালেন, কিছু কিছু ভেগান সমাজ তাদের সদস্যদের বলছে, ভিটামিন বি ১২ ইঞ্জেকশন নাও। ভেগান খাদ্য এবং একইসাথে এই ইঞ্জেকশন নিয়ে একটি ভিটামিনের অভাব পূরণ করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ফিল্ডার।

আলোচনা চলতে চলতেই একজন শ্রোতা প্রশ্ন করেন, অ্যালোপাথি ওষধির সীমাবদ্ধতার কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আয়ুর্বেদ বা বিভিন্ন লতাগুল্ম ব্যবহার করে তো রোগ নিরাময়ের বন্দোবস্ত করা যেতেই পারে। তাতে ক্ষতি হয় না। ফিল্ডার বলেন, না লতাগুল্মও শরীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। ফের প্রশ্ন আসে, প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ নিরাময় করা সম্ভব যদি প্রকৃতির কাছাকাছি দূষণহীন পরিবেশে থাকা যায়। কিন্তু কলকাতার মতো শহরে বাস করে কি কোনো ওষুধ ছাড়া রোগ নিরাময় সম্ভব? সরাসরি উত্তর দেন ফিল্ডার, হ্যাঁ সম্ভব। এই উত্তরে শ্রোতাদের অনেকেই অস্বস্তিতে পড়ে যায় বলে মনে হলো আমার। একটুক্ষণ সবাই চুপচাপ থাকার পর আর্থকেয়ার বুকস্‌-এর কর্ণধার বিনীতা মনসাতা বলেন, আমি প্রায় তিরিশ বছর ধরে কোনোরকম ওষুধ ছাড়া চলছি। এরমধ্যে আমার দুটি বাচ্চা হয়েছে, তাদের কোনোরকম ভ্যাক্সিনেশন ছাড়া আমরা বড়ো করেছি, কোনোরকম ওষুধ তাদের ওপর প্রয়োগ করা হয়নি। এই তিরিশ বছরে আমার ম্যালেরিয়া হয়েছে, টাইফয়েড হয়েছে। বিনীতাকে প্রশ্ন করেন একজন শ্রোতা, ম্যালেরিয়া টাইফয়েড আপনি ওষুধ না খেয়ে সারালেন কীভাবে? বিনীতা উত্তর দিলেন, ম্যালেরিয়ার জ্বর শুরু হতেই আমি উপবাস শুরু করলাম, পাঁচদিন উপোস করলাম আমি। উত্তর শুরু হতে না হতেই শ্রোতাটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, এই যে আপনি ম্যালেরিয়ার মধ্যে উপবাস করছেন, এটা কি ‘মেডিক্যালি অ্যাডভাইসিবল’? সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বিনীতা তাঁর কথা শেষ করতে চাইলেন, দশ বছর পর ফের আমার ম্যালেরিয়া হয়। তখন আমি ৯ দিন উপোস করি। তারপর থেকে আজ অবধি আমার ম্যালেরিয়া হয়নি। ফের প্রশ্ন এল, কী ধরনের ম্যালেরিয়া? ম্যালেরিয়ার মধ্যে উপোস কি করা উচিত, মেডিক্যাল সায়েন্স কী বলে? কিন্তু, এই প্রশ্নের কি উত্তর হয়? কে সেই ‘মেডিক্যাল অথরিটি’ যে নিরপেক্ষভাবে পরামর্শ দিতে পারে? তাছাড়া যেকোনো মেডিক্যাল গবেষণা এখন শত শত কোটি টাকার ইন্ডাস্ট্রি। সেগুলোর পেছনে থাকে কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানির টাকা। সে কীভাবে সুপরামর্শ দেবে? বিনীতা বললেন, প্রথমত এটা বিশ্বাসের প্রশ্ন। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে কোনো ওষুধ ছাড়াই রোগ সারে। একজন শ্রোতা, ভর্তিকা, ধরিয়ে দিলেন, ওষুধ ছাড়া রোগ সারে না, এটাও কিন্তু আদতে একটা বিশ্বাস। এটা ধরে নেওয়া হয়, তারপর কোন ওষুধে রোগ সারবে না সারবে তার খোঁজ করা হয়। তাই নিয়ে বিতর্ক হয়। তবে বিনীতা যেটাকে বললেন বিশ্বাস — সেটাকেই খানিক আগে জন ফিল্ডার বলেছেন, দর্শন বা ফিলোজফি। দর্শন, স্থান নিরপেক্ষ। দূষণযুক্ত স্থানে থাকলে ওষুধ খেতে হবে আর দূষণমুক্ত স্থানে থাকলে ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই — এই ভাবনাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করলেন জন ফিল্ডার।