- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘এত দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলন আর কখনো হয়নি স্বাধীন বাংলায়’

পলাশ চৌধুরি, ১৫ মার্চ#

জয় গুরু, দাদা। বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনাদের কার্যক্রম, আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে আমরা এক মায়ের সন্তান। অথচ দুর্ভাগ্য, একই ছাদের নিচে থেকেও আমাদের অনেকে আজ বিভক্তির পথ বেছে নিয়েছে। পরিস্থিতির কারণে আমার যোগাযোগ রাখাটা অনিয়মিত হচ্ছে। আপনার প্রশ্নের ধারাবাহিকতায় আমরা বক্তব্য উপস্থাপন করছি।
আমি রাজনৈতিক বোদ্ধা নই। কিন্তু শিল্পী হিসেবে আমার সামাজিক দায়বোধ আমায় তাড়িত করে। দেশের শুধু নয়, সমগ্র বিশ্ব জুড়ে যে অস্থিরতা, অনৈতিকতার আস্ফালন … ধর্মের নামে ক্ষমতার লড়াই .. পুঁজির স্বেচ্ছাচার … শাসনের নামে শোষণ …. সবকিছুই সচেতন মানুষকে ভাবায়, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু পুঁজির তৈরি করা টিঁকে থাকার লড়াই মানুষকে আজ বড্ড একা করে দিয়েছে।  বিশ্বে ৭০০ কোটি মানুষ, সবাই একা।
আজকের এ আন্দোলন পেরেছিল এই একাকিত্ব ঘুচিয়ে এক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করতে। যার টানে আমিও নেমেছি পথে। ক্ষমতাসীনদের মধ্যস্ততায় বৈদেশিক শোষণে জর্জরিত আমরা। আর এ নাগপাশ ছিঁড়ে ফেলার স্বপ্নে বিভোর একা হয়ে পড়া মানুষগুলো পাশাপাশি হাতে হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হঠাৎ এক আশার সুর্যোদয়ের হাতছানিতে নেমে পড়ে রাজপথে। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে আমরা তরুণ সমাজ অভিভাবক শূন্য বেড়ে উঠেছি। এর সুযোগ নিয়েছে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা। আর বিশ্বায়নের অসম দৃষ্টি শহর আর গ্রামকে করেছে বিভাজিত। এইসকল কিছুর বিরুদ্ধে শাহবাগে তরুণদের এ জাগরণ বলে আমি মনে করি। তা রাজাকারের ফাঁসির দাবির মতো সার্বজনীন এক সুরে সূত্রপাত হয়েছে।
এত দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলন আর কখনো হয়নি স্বাধীন বাংলায়। তাই স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দলেরা আজ আতঙ্কিত। তাই এ তরুণ সমাজের সূচিত করা আন্দোলনকে কব্জা করে তারা তাদের চিরায়ত ভোটের রাজনীতিতে একে ব্যবহারের পাঁয়তারা শুরু করে। আন্দোলনকে কলংকিত করবার চেষ্টা শুরু হযেছে আজ। অপরদিকে ধর্ম ব্যবসায়ীরা সরল ধর্মপ্রাণ বাঙালিকে দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলেছে। জামায়াতে ইসলাম, যারা জন্ম নিয়েছিল ধর্মকে ব্যবহার করে পাকিস্তানের শোষণ টিঁকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে, তারা কালে কালে সকল সময়ের ক্ষমতাসীন দলগুলোকে ব্যবহার করে এবং বাংলাদেশের সরল মুসলিমদের বিভ্রান্ত করে আজ ব্যাপক শক্তি অর্জন করেছে। এর সাথে বৈদেশিক ইন্ধন তো আছেই। আজ গ্রামের সরল মানুষ থেকে শহরের নানান জটিলতা ক্লিষ্ট তথাকথিত শিক্ষিত ভদ্দরলোক সকলে বিভ্রান্ত, বাম ডান কেউ বাদ নয়। মাদ্রাসা এবং মসজিদকে অপব্যবহার করে দেশের প্রতিটি প্রান্তে  জামায়াতে ইসলাম  শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। আন্দোলনকে নিয়ে নানা অপপ্রচার-গুজব ছড়াচ্ছে তারা। চাঁদে সাঈদীকে দেখা কিংবা আন্দোলনকারীরা সব নাস্তিক … ইহুদিদের মদত … মসজিদ ভেঙ্গে ফেলছে ইত্যাদি। এর বিরুদ্ধে কথা বললে পুড়িয়ে পর্যন্ত মারছে। অপরদিকে জামায়াতে ইসলাম বিরোধী ইসলামিক রাজনৈতিক জোটকেও পেছন থেকে মদত দিচ্ছে তারা। বহুরুপী এক অবস্থান তাদের।