- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

এক ডজন ওয়ার্ডের কাহিনী : নাগরিক চেতনা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে

ছন্দা বাগচী, ফার্ন রোড, ১২ মার্চ#

baithakkhana

এবার মহানগরীর উত্তর-পথে পা বাড়ানোর পালা। মধ্য আর উত্তরের সীমানায় সুপ্রাচীন প্রাচী প্রেক্ষাগৃহের পেছনে সারপেনটাইন লেন ধরে ৫০ নং ওয়ার্ড পরিক্রমায় এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হল — নাগরিক চেতনা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন নাগরিকরাই। নাগরিক সচেতনতার প্রসারে পুরসভার পক্ষ থেকে লাগাতার প্রচার কর্মসূচিকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে যত্রতত্র ময়লা ফেলার চিরাচরিত অভ্যেসের ফলে জঞ্জাল সাফাই নিয়মিত হলেও যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন নয় এই ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট — এই অভিযোগে সরব হলেন সারপেনটাইন লেনের এক বাসিন্দা। তাঁর সোজাসাপটা বচন — নাগরিকরা সচেতন না হলে পুর পরিষেবার সুফল ভোগ করা সম্ভব নয়। পুরপিতা বা মাতার যত সদিচ্ছাই থাকুক।
তবে ৫০নং ওয়ার্ডে বরাবরই, এমনকী গত পুরবোর্ডের আমলেও পরিষেবা যথেষ্ট উন্নত, জানালেন এলাকার পুরোনো বাসিন্দারা। যাঁদের অন্যতম, সদ্য পরিচিত সুদীপ মান্না এলাকার হাল হকিকত সম্পর্কে যথেষ্টই ওয়াকিবহাল। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভার জল সরবরাহ পর্যাপ্ত, পরিশ্রুত এবং পানযোগ্য। রাস্তায় ব্লিচিং পাউডার দেওয়া হয়। মশার তেল ছড়াতে মাঝে মধ্যেই বাড়ি বাড়ি ঘোরেন পুরকর্মীরা, বর্ষাকালে বিক্ষিপ্তভাবে জল জমলেও দ্রুত নেমে যায়। নিকাশি নিয়েও সমস্যা নেই তেমন। বস্তি এলাকাও বেশ পরিচ্ছন্ন। রাস্তা মেরামতির দিকেও নজর দেওয়া হয়, বাস্তবেও দেখলাম। ত্রিফলা চোখে না পড়লেও আলোর অভাব নেই। ট্রেড লাইসেন্স, মিউটেশন, প্রমোটারি নিয়ে অভিযোগ বিস্তর, প্রামাণ্য তথ্য অমিল।
তবে হকার সমস্যার জন্য গোটা শহরের মতো এই ওয়ার্ডও জর্জরিত। ‘হকারদের পেটে লাথি না মেরে’ অন্তত ফুটপাথের একপাশে সরিয়ে পথচারীদের যাতায়াতের যথেষ্ট জায়গা রাখা দরকার। বিশেষ করে জনবহুল বড়ো রাস্তায় — এমন দাবি করলেন অনেকেই। সেই সূত্রে মনে হল শিয়ালদহ স্টেশন আর কোলে মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় বসে পড়া ফল, সবজি বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণও জরুরি বলে মনে হল। শুধু পথ-দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য নয়, কলকাতাকে গতিশীল করতেও। একই অবস্থা শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরের আশেপাশের প্রায় সব ওয়ার্ডেই। ফ্লাইওভারের সমান্তরাল পথে চলমান জনস্রোত আর রিক্সা ভ্যানের পথচারীদের ঘাড়ে পড়ার চেনা ছবি পরিবর্তনের পরেও অপরিবর্তিত!
ছোটো রাস্তায় যানজটের এই সমস্যার জন্য অবশ্যই কলকাতা পুরসভাকে কেবল দায়ী করা যাবে না। বরং অনেক ওয়ার্ডেই ফুটপাথ সংস্কার করে পুরপ্রতিনিধিরা পথচারীদের স্বস্তি দেবার চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানেও নানান বিপত্তি! অনেক পুরোনো বাড়ি পুর আইনের তোয়াক্কা না করে ফুটপাথের জায়গা জুড়ে অবস্থান করছে — কোথাও বা ফুটপাথ, এমনকী রাস্তা আটকে গজিয়ে ওঠা ধর্মস্থান, হরেক রঙের শহিদ বেদী, যা তুলতে গেলে খণ্ডযুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। আবার শহুরে বিত্তবানদের এক বিরাট অংশের মধ্যে গ্যারেজের খরচ বাঁচাতে ফুটপাথে গাড়ি রাখার প্রবণতা বাড়ছে। স্থানীয় পুরপিতার প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে নিখরচায় রাস্তা বা গলিতে ম্যারাপ বেঁধে বিয়ের আসর বসানোর ঝোঁকও সম্পন্ন নাগরিকদের মধ্যেই বেশি মাত্রায় লক্ষ্য করা যায়। তাই ছোটো রাস্তায় যানজটের জন্য শুধু হকারদের অভিযুক্ত করার মানে হয় না। গড়িয়াহাট সহ অনেক ফ্লাইওভারের অবস্থানও ট্রাফিক চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে।
তার ওপর পথচারীদের জন্য শৌচালয় বানাতেও সেই ফুটপাথই ভরসা! এক্ষেত্রেও পরিচ্ছন্নতা আর রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নে সরকারি অসরকারি উদ্যোগের পার্থক্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় নিখরচার শৌচালয় আর ‘সুলভ’ কমপ্লেক্স-এর তফাত। তবে সার্বিক বিচারে পরিচ্ছন্নতার নিরিখে উত্তর যে দক্ষিণ থেকে খুব পিছিয়ে নেই, মালুম হল ৫০নং ওয়ার্ড থেকে ৪৯নং ওয়ার্ড হয়ে উত্তর-পথে আমার দীর্ঘ পরিক্রমায়।  ক্রমশ