- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

উদয়কুমারের সঙ্গে কথা

২৯ ডিসেম্বর ২০১২ সন্ধ্যায় ‘পিপ্‌লস মুভমেন্ট এগেনস্ট নিউক্লিয়ার এনার্জি’ নামক সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর এবং কুডানকুলাম পরমাণু শক্তি বিরোধী আন্দোলনের সংগঠক এস পি উদয়কুমারের সঙ্গে কলকাতা থেকে ইডিনথাকারাই-এ আগত কর্মীদের আলাপ#

মেহের ইঞ্জিনিয়ার : আপনাদের ওপর পুলিশের দমন এখন কীরকম?

উদয়কুমার : পুলিশ এখন পর্যন্ত খুব সক্রিয় নয়। পুলিশের সিআইডি থেকে আমাকে ডেকেছিল। ওরা জিজ্ঞেস করছিল, বাইরে থেকে আপনারা কারা আসছেন। ওরা বাইরে থেকে যারা আসছে তাদের কোনো বাধা দেবে কিনা আমি জানি না। আগামীকাল সেটা বোঝা যাবে।

মেহের ইঞ্জিনিয়ার : ওরা সেটা নাও করতে পারে। সারা দেশ থেকে মানুষ আসছে। ইতিমধ্যে দিল্লির ঘটনাটা (ধর্ষিতা মেয়েটি সদ্য মারা গেছে) ঘটে গেছে। ওদের আপাতত কিছুটা বোধোদয় হতে পারে।

অমিতা নন্দী : এখান থেকে কুডানকুলাম কতদূর?

উদয়কুমার : পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র? এই গ্রামের শেষেই কুডানকুলাম, এখান থেকে ১-২ কিলোমিটার। কিন্তু প্ল্যান্টের গেটে পৌঁছাতে গেলে ৬-৭ কিলোমিটার যেতে হবে।

জিতেন নন্দী : আমরা কি ওখানে যেতে পারি?

উদয়কুমার : হ্যাঁ, আমরা কাল সকালেই ওখানে যেতে পারি। রাস্তা, বিচ ধরে বা সমুদ্রপথে নৌকায় আমরা যেতে পারি। সমুদ্রের খুব কাছেই পুরো প্ল্যান্টটা, সমুদ্র থেকে ভালোই দেখা যায়।

মেহের ইঞ্জিনিয়ার : ওরা কি সম্প্রতি আপনাদের বিরক্ত করেছে? কারণ আপনি তো খুব খারাপ লোক!

উদয়কুমার : না সেরকম কিছু হয়নি। ২৯ অক্টোবর আমরা তামিলনাড়ু বিধানসভার সামনে একটা অবস্থান করেছিলাম। তারপর আমরা ১০ ডিসেম্বর তামিলনাড়ুতে কয়েক জায়গায় রাস্তা রোকো কর্মসূচি নিয়েছিলাম। এরপরে আমরা তেমন কিছু করিনি। আমরা যখন চুপচাপ থাকি, ওরাও চুপচাপ থাকে। কিন্তু আমরা সক্রিয় হয়ে উঠলে ওরা তেড়েফুঁড়ে ওঠে।

মেহের ইঞ্জিনিয়ার : যারা জেল হেফাজতে ছিল, তাদের এখন কী অবস্থা?

উদয়কুমার : ছ-জন বাদ দিয়ে সকলেই ছাড়া (বেল) পেয়ে গেছে। ছজনের বিরুদ্ধে গুণ্ডা আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন এই গ্রামের, দুজন কুডানকুলামের আর একজন একটা ছোট্ট বস্তির। যারা বেল পেয়েছে সকলের ওপর দেশদ্রোহিতার অভিযোগ ছিল। গতকাল মাদুরাই জেল থেকে জনা পঁয়ত্রিশ শর্তসাপেক্ষে ছাড়া পেয়েছে, তাদের প্রত্যেকদিন থানায় গিয়ে দেখা করতে হবে।

জিতেন নন্দী : জেভিয়ার আম্মা তো ছাড়া পেয়েছেন।

উদয়কুমার : জেভিয়ার আম্মা, সুন্দরি ও সেলভি এর মধ্যে রয়েছেন। এদের মধ্যে ১৫ জন যে কোনো জায়গায় যেতে পারবে। তারা কুডানকুলামে ফিরে এসেছে। এই ১৫ জনকে সপ্তাহে একদিন কুডানকুলাম পুলিশ স্টেশনে গিয়ে হাজিরা দিতে হবে। বাকিরা মাদুরাইতে থেকে গেছে। ওদের জন্য আমাদের মঙ্গলবার আবার আদালতে হাজির হতে হবে। কিন্তু যে ছজন গুণ্ডা আইনের কবলে পড়েছে, তাদের ব্যাপারটা নিয়ে সমস্যা রয়েছে।

বিশ্বজিৎ রায় : এদের সকলকেই কি দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল?

উদয়কুমার : পঁয়ত্রিশ জনের বেশিরভাগের ওপর দেশদ্রোহিতা বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

জিতেন নন্দী : গুণ্ডা আইনে যে ছজন বন্দি রয়েছে, এরা কি সকলেই পুরুষ?

উদয়কুমার : এরা সকলেই পুরুষ। একজনের বয়স ৬৮ বছর, তিনি একজন জেলে এবং জীবনে তাঁর কোনো অপরাধের নজির নেই। তিনি সামুদ্রিক লতাপাতা সংগ্রহ করছিলেন। খুবই গরিব মানুষ …

মেহের ইঞ্জিনিয়ার : গুণ্ডা আইন প্রয়োগ হল এদের ওপর, কী গুণ্ডাগিরি এরা করেছে?

উদয়কুমার : সরকার চারপাতার একটা বই তৈরি করেছে। সেখানে সমস্ত সাজানো অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, কেউ মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে পুলিশকে নাকি ভয় দেখিয়েছে, ইত্যাদি।

বিশ্বজিৎ রায় : পঁয়ত্রিশ জনের মধ্যে কতজন মহিলা?

উদয়কুমার : ৬-৭ জন।

বিশ্বজিৎ রায় : যাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছে, এরা কি সকলে সক্রিয় কর্মী?

উদয়কুমার : না-না। এরা সকলেই গৃহবধু, চাষি বা জেলে। এদের কেউ সক্রিয় কর্মী নয়, কারো কোনো অপরাধমূলক অতীত নেই।

বিশ্বজিৎ রায় : শহরে যারা এই আন্দোলন সমর্থন করছে বা তাতে সক্রিয় কর্মীর ভূমিকা নিয়েছে, তারা কেউ গ্রেপ্তার হয়নি?

উদয়কুমার : অনেকেই তারা গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি একদম ঠিকঠাক তথ্যটা জানাই। মোট ৬৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছিল। তার মধ্যে ৪০ জন কুডানকুলামের, ১৪ জন ইডিনথকারাইয়ের আর ১২ জন ভৈরবী ক্যানালের। এদের মধ্যে ৭ জন মহিলা, ৪ জন বাচ্চা ছেলে এবং একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। মোট ৫৬ জন বেল পেয়েছে। গত সপ্তাহে একজন মহিলা শর্তাধীন বেল পাওয়া অবস্থায় মারা গেছেন। গুণ্ডা আইনে বন্দি ৬ জন ছাড়াও আরও ৩ জন জেলে রয়েছে।

বিশ্বজিৎ রায় : এখন অবস্থাটা কীরকম? পুলিশের হয়রানি কি চলছে?

উদয়কুমার : পুলিশের হয়রানি তো চলছেই। ওরা এই গ্রামে সরকারি বাস আসতে দিচ্ছে না। গ্রামের লোক বাইরে গেলে পুলিশ তাদের থামিয়ে নিজেদের কাছে থাকা ছবির সঙ্গে তাদের মুখ মিলিয়ে দেখছে। যদি ওই ছবির সঙ্গে মিলে যায়, তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দু-সপ্তাহ আগে ওরা সাতজন যুবককে গ্রেপ্তার করে। চারজনকে ছেড়ে দিলেও তিনজন এখনও ওদের হেফাজতে রয়েছে। কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে বেরোতে পারছে না। আমি এবং পুষ্পরায়ন গত দশমাস গ্রামের বাইরে যেতে পারিনি। আমরা বেরোলেই ওরা গ্রেপ্তার করবে। মেলরিট (যে মহিলা কলকাতায় এসেছিলেন ৬ আগস্ট) বেরোতে পারছে না। যদি অসুখবিসুখ হয়, তাহলে সমস্যা হচ্ছে।

জিতেন নন্দী : আপনার স্ত্রী এবং তাঁর স্কুল কী অবস্থায় রয়েছে?

উদয়কুমার : আমার স্ত্রী এবং বাচ্চারা নাগেরকয়েল-এ ঠিকই আছে। আগামীকাল সম্ভবত তিনি এখানে আসবেন। স্কুলটাও চলছে।

বিশ্বজিৎ রায় : কতজনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অভিযোগ আনা হয়েছে?

উদয়কুমার : ১৩,৩৫০ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অভিযোগ আনা হয়েছে। দেশদ্রোহিতার অভিযোগ রয়েছে ৮,৪৫৬ জনের বিরুদ্ধে। হত্যা করার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে ১৮,১৪৩ জনের বিরুদ্ধে। আমাদের বিরুদ্ধে ৩২৫টা মামলা করা হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে ১৫,৫৬৫ জনের ওপর।

বিশ্বজিৎ রায় : আমরা শুনেছি যে আপনাদের এখানে সভা করতে বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু বাইরের লোককে আটকানো হবে।

উদয়কুমার : আসলে আমাদের ওপর ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। আমরা আইনত এখানে কিছু করতে পারি না। প্রতিদিন ওরা আমাদের ওপর মামলা দায়ের করে চলেছে। টেকনিকালি ওরা এখানে লোককে আসতে বাধা দিতে পারে না। যদি ওরা লোককে রাস্তায় আটকায়, আমরা তাদের নৌকায় করে এখানে নিয়ে আসব। তাই ওরা নিজেদের মুখ পোড়াতে চায় না। ওরা নিজেরা সরে থাকে। লোকে আসুক। যখন লোকে এখান থেকে ফিরে যায়, কখনও কখনও ওরা তাদের হয়রান করে। তাদের পুলিশ স্টেশনে ধরে নিয়ে যায়, জিজ্ঞাসাবাদ করে, কেন তারা এখানে এসেছিল? তারপর যথারীতি ছেড়ে দেয় কিংবা মাঝেমধ্যে তাদের নামে কেস ফাইল করে। কিন্তু সাধারণত ওরা কেস লেখে উদয়কুমার, পুষ্পরায়ন এবং আরও ২০০০ জন।

বিশ্বজিৎ রায় : এটাই তো ভারতীয় দণ্ডবিধির সৌন্দর্য্য! সেখানে একটা ‘আদার্স’-এর জায়গা রয়েছে। সেখানে আরও ১০০০ জন থাকতে পারে।

মেহের ইঞ্জিনিয়ার : নারায়ণস্বামী বলেছিলেন, ডিসেম্বরের শেষে প্ল্যান্টে উৎপাদন শুরু হবে।

উদয়কুমার : নারায়ণস্বামী প্রথমে বলেছিলেন ১৫ ডিসেম্বর, তারপর বললেন, ডিসেম্বরের শেষে, ২৪ তারিখ। সেটাও স্থগিত হয়ে বলা হল জানুয়ারিতে শুরু হবে। কিন্তু ওদের ওয়েবসাইটে বলছে, (কমিশনিং-এর প্রস্তুতিমূলক) ৯৯.৬৫% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা জানি না বাকি ০.০৫% হতে কত সময় লাগবে। আমাদের কাছে ভিতরের খবর ওখানে গুরুতর কোনো সমস্যা রয়েছে। সম্ভবত টেকনিকাল গোছের। তাতে মনে হয় কয়েকমাসের আগে কিছু হবে না। এদিকে আমরা সুপ্রিম কোর্টের জাজমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছি। খুব সম্ভবত ১৮ জানুয়ারি সেটা পাওয়া যাবে।

বিশ্বজিৎ রায় : আপনারা যে দাবি নিয়ে লড়ছেন, সেটা এখন একটা দুনিয়া জোড়া বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু চেন্নাই বা তিরুনেলভেলিতে যেটুকু নজরে এসেছে, শহুরে মধ্যবিত্তদের মধ্যে এ নিয়ে একটা ঔদাসীন্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। আপনারা এদের নিয়ে কী ভাবছেন? কিছু পরিকল্পনা রয়েছে আপনাদের?

উদয়কুমার : আমার এ ব্যাপারে কোনো উত্তর জানা নেই। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য, সেটা ধর্ষণ, পরমাণু ইস্যু বা দারিদ্র্য সব ব্যাপারেই তাদের কোনো গরজ নেই।

মেহের ইঞ্জিনিয়ার : লোকে উদাসীন নাকি তারা আপনাদের বিরোধিতা করছে?

উদয়কুমার : ঔদাসীন্য শব্দটাই এদের সম্পর্কে যথার্থ। গোড়ার দিকে যখন মনমোহন সিং আর জয়ললিতা সরকার পাওয়ার কাটের সমস্যা নিয়ে খেলছিলেন, কিছু লোক মনে করেছিল কুডানকুলাম হলে পাওয়ার কাটের সমস্যা মিটবে। তারপর গতবছর মার্চে জয়ললিতা সরকার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করল (কুডানকুলাম প্ল্যান্ট চালু করার পক্ষে চলে গেল)। মাঝে দশমাস পার হয়ে গেল, প্ল্যান্টের কিছুই এগোল না। আমাদের আন্দোলন চলতে থাকল। এখন লোকে বুঝতে পারছে, বিদ্যুৎ সমস্যার উত্তর নিশ্চয় কুডানকুলামে নেই। এরপর কর্নাটকে কোলার ইস্যুর পরে তামিলনাড়ুর লোকে আরও ভালো বুঝতে পারছে। যখন কর্নাটকের মানুষ বর্জ্যটাও নিতে চাইছে না, সেখানে তামিলনাড়ু সেই জিনিসটা উৎপাদন করতে যাবে কেন? তামিলনাড়ু সরকার এই প্রোজেক্টকে সমর্থন করছে আর কেরালার মুখ্যমন্ত্রী তাদের কাছ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাইছেন। আমরা বলেছি, আপনারা যখন ৫০০ মেগাওয়াট এখান থেকে চাইছেন, তাহলে কেন কেরালায় এই প্ল্যান্টটা করতে দিচ্ছেন না? সে ব্যাপারে তাঁরা রাজি নন। এটা তামিলনাড়ুর নাগরিক সমাজে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এখন তামিলনাড়ুর মানুষ বিষয়টা অনেকটাই ভালো বুঝতে শিখেছে। তারা জন আন্দোলনকেও বুঝছে। তারা বিদ্যুৎ সঙ্কটকে সমালোচনা করছে এবং কুডানকুলাম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করার পক্ষে নেই। আর একটা জিনিস তো আমরা সকলেই জানি, মধ্যবিত্তরা উন্নয়ন, আধুনিকতা ইত্যাদিতে খুবই আগ্রহী। তারা নিজের ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পাঠানোর জন্য লড়ে যাচ্ছে আর আমরা তাদের গিয়ে বলব পরমাণু বা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র খারাপ, এটা কেমন করে হয়? কিন্তু গতবছরের তুলনায় অবস্থা অনেক আশাব্যঞ্জক।

অমিতা নন্দী : আমরা এখানে আসার পথে অনেক উইন্ড মিল দেখলাম …

উদয়কুমার : ঠিক। এগুলো থেকে এখানে ৬০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে। শুধু তিরুনেলভেলিতে। তামিলনাড়ু উইন্ড এনার্জি উৎপাদনে দেশের মধ্যে এক নম্বর।

বিশ্বজিৎ রায় : আপনি নিজে একজন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা মানুষ হয়ে, একজন মধ্যবিত্ত হিসেবে শিক্ষালাভ করে আপনি কীভাবে এই প্রান্তিক মানুষের জীবন-জীবিকার আন্দোলনে যুক্ত হলেন?

জিতেন নন্দী : এটা মোটেই প্রান্তিক মানুষের আন্দোলন নয়, এটা বসুন্ধরাকে রক্ষা করার আন্দোলন।

বিশ্বজিৎ রায় : বৃহত্তর অর্থে তাই। কিন্তু যেভাবে রাজনৈতিকভাবে মানুষকে শামিল করা হয়েছে সেদিক থেকে আমি প্রশ্নটা করছি। এখানে আমাদের সঙ্গে চেন্নাই থেকে হরি এসেছে। কীভাবে হরির মতো ছাত্ররা আরও বেশি সংখ্যায় এই আন্দোলনে আসবে?

উদয়কুমার : আমি জনসাধারণকে অন্যভাবে দেখি। আমি মনে করি আমরা সংখ্যাগুরু। ভারতের বেশিরভাগ মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবনধারণ করতে চায়। অন্যরা হল সংখ্যালঘু। যেমন মনমোহন সিং, সোনিয়া গান্ধী ইত্যাদিরা। এরা নিজেদের হাতে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। এদের শিক্ষা রয়েছে, পরিচিতি রয়েছে। সাধারণ ভারতীয়রা একটা সৎ জীবনযাপন করতে চায়। তারা সৎ, কঠোর পরিশ্রমী, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। আমার মনে হয় এদেশে শিক্ষা হল সবচেয়ে বিপজ্জনক জিনিস। যাদের পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে, তারা তো আরও বিপজ্জনক!

বিশ্বজিৎ রায় : সামনেই রয়েছে কুডানকুলামের কমিশনিং। আপনি কি সত্যিই মনে করেন যে আপনাদের প্রতিরোধ এই কমিশনিং বন্ধ করতে পারবে? নাকি এখানে একটা ফুকুশিমা গোছের বিপর্যয় ঘটার পর কোনো একদিন এটা বন্ধ হবে?

উদয়কুমার : আমি আশ্চর্য্য কিছু কারণে এখনও আশাবাদী। প্রথমত, আমি প্ল্যান্টের কিছু কর্মীর কাছে শুনেছি এখনই কমিশনিং হতে পারবে না, আরও কয়েকমাস সময় লাগবে। দ্বিতীয়ত, সুপ্রিম কোর্টের জাজমেন্টে কিছু রিলিফ আমরা পেতেও পারি। ‘পোস্ট ফুকুশিমা টাস্ক ফোর্স’ যে ১৭টি সুপারিশ করেছে, হয়তো আদালত সেই সুপারিশগুলো পূরণ করতে বলতে পারে, হয়তো তারা ফের ‘এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট’ করতে বলতে পারে। আবার আদালত এসব নাও বলতে পারে। যদি আমরা আরও ছয় মাস চালিয়ে যেতে পারি, আমাদের শক্তি বাড়বে। কারণ পার্লামেন্ট নির্বাচন এসে পড়বে। তখন সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের কথায় একটু বেশি কান দেবে। সেই কারণে আমি আশাবাদী। আর যদি পরের সপ্তাহেও কমিশনিং হয়ে যায়, লড়াই থামবে না। বহু প্ল্যান্ট রয়েছে যেগুলো চালু হওয়ার পরেও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। একটা জাতীয় বিতর্ক সৃষ্টি হোক, আমরা নিশ্চয় বহু মানুষকে সচেতন করতে পারব। কোলার-এর মানুষ একজোট হয়ে মাত্র এক সপ্তাহে দারুণ কাজ করেছে; অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলার কোবাডায় গ্রামের মানুষ আমাদের মতো আন্দোলন শুরু করেছে।

বিশ্বজিৎ রায় : আপনার যুক্তির সঙ্গে আমি একমত। তবে এখনও আপনার রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা যথেষ্ট বেশি রয়েছে। ডিএমকে এবং এডিএমকে আপনাদের সমর্থন করছে না। একমাত্র ভাইকো সমর্থন করেছেন।

উদয়কুমার : সবসময় ছোটো দলগুলো আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা তাদের বোঝাতে পেরেছি। ছটা বড়ো দল — কংগ্রেস, বিজেপি, ডিএমকে, এডিএমকে, সিপিআই আর সিপিএম — বাদ দিয়ে সব রাজনৈতিক দল তামিলনাড়ুতে পরমাণু শক্তির বিরোধিতা করছে। এটা কোনো ছোটোখাটো সাফল্য নয়।

বিশ্বজিৎ রায় : কমিউনিস্ট পার্টিগুলো আপনাদের সমর্থন না করলেও তাদের ভিতরে অনেক কর্মী আপনাদের সমর্থন করে। আপনারা কি এরকম কর্মীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ গড়ে তুলতে পেরেছেন?

উদয়কুমার : কমিউনিস্ট পার্টিগুলো সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত। তারা জানে না তাদের পার্টির ভিতরে, দেশে বা দুনিয়ায় কী ঘটে চলেছে। সিপিএম জাইতাপুর প্ল্যান্টের বিরোধিতা করছে, কিন্তু কুডানকুলামকে সমর্থন করছে। সিপিআই একই অবস্থান নিয়েছে। এরা এখনও রাশিয়াকে কমিউনিস্ট দেশ বলে মনে করে চলেছে। অচ্যুতানন্দন ব্যতিক্রম। তিনি যে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন, সে বিষয়ে আমরা খুশি। কিছু হৃদয় পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি সেন্ট্রাল কমিটিতে তাঁর বক্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন বটে। কিন্তু সেটা সত্য নয়। তিনি কুডানকুলামের বিরুদ্ধেই রয়েছেন।

জিতেন নন্দী : কিন্তু তিনি এই অবস্থান নিতে পেরেছেন, কারণ কেরালায় পরমাণু বিষয়ে একটা বিরুদ্ধ জনমত রয়েছে।

উদয়কুমার : এটা ঠিক।