- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

উচ্চারণ অনুযায়ী বানানের প্রবক্তা মহাত্মা শ্যামাচরণ শর্ম্ম সরকারের দ্বিশত বর্ষ উদ্‌যাপন

১৯ আগস্ট, দীনবন্ধু বিশ্বাস, শান্তিপুর, নদিয়া#

শ্যামাচরণের আত্মজীবনীর কিছু অংশ পাওয়া যায় ওয়েস্ট বেঙ্গল পাবলিক লাইব্রেরি নেটওয়র্ক-এর ডিজিটাল আর্কাইভে।
র্ম্ম শ্যামাচরণের আত্মজীবনীর কিছু অংশ পাওয়া যায় ওয়েস্ট বেঙ্গল পাবলিক লাইব্রেরি নেটওয়র্ক-এ

১১ আগস্ট ২০১৩ রবিবার বিকালে  ‘গোরাগাঙনি’ সাহিত্য পত্রিকার শান্তিপুর শাখার উদ্যোগে মহাত্মা শ্যামাচরণ শর্ম্ম  সরকারের দ্বিশত বর্ষ সাড়ম্বরে উদ্‌যাপন হল শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরির নির্মলেন্দু লাহিড়ী মঞ্চে। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে শ্যামাচরণ শর্ম সরকারের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপক দুটি গান পরিবেশিত হল। সেই সুরের দোলায় দুশো বছরের অতীত শ্যামাচরণ যেন নতুন করে জেগে ওঠেন। স্বাগত ভাষণ দান করেন শ্রী অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। এরপরেই মহাত্মা শ্যামাচরণের স্মরণে ‘স্মারক পত্র’ প্রকাশ করেন ড. বারিদবরণ ঘোষ। তিনি একইসঙ্গে ‘উনিশ শতকের নবজাগরণে শ্যামাচরণের ভূমিকা’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন। অজানা তত্ত্ব ও তথ্যে আবেশে বিহ্বল উপস্থিত তিনশত দর্শক।

নদিয়ার মামজোয়ান থেকে কলকাতা, কলকাতা থেকে দিল্লি, শ্যামাচরণের নবজাগ্রত চেতনা ও পাণ্ডিত্য কীভাবে ছড়িয়ে পড়ল, বাক্যের আলপনাতে তা সুন্দরভাবে আঁকলেন ড. ঘোষ মহাশয়। এই মুগ্ধতার ঘোর কাটতে না কাটতেই ড. নির্মল দাসের আলোচনা ছিল ‘বাংলা ব্যাকরণের ক্রমবিকাশ ও শ্যামাচরণ শর্ম্ম সরকার’। রামমোহনের গৌড়ীয় ব্যাকরণের (১৮৩৩) পরেই শ্যামাচরণের ‘বাঙ্গালা ব্যাকরণ’ (১৮৫২) প্রকাশিত হয়। ড. দাস আমাদের জানালেন, এর মাঝে আর কোনো বাংলা ব্যাকরণ সেভাবে রচিত হয়নি। শ্যামাচরণ ছিলেন বাংলা ব্যাকরণ চর্চায় তুলনামূলক ব্যাকরণ চর্চার জনক। তিনিই প্রথম উচ্চারণ অনুযায়ী বানান লেখার কথা ঘোষণা করেন। এগারোটি ভাষা অনর্গল বলতে ও লিখতে পারতেন শ্যামাচরণ।

শুধু একতরফা আলোচনাই হয়নি, বক্তৃতার ফাঁকে প্রশ্নোত্তরের সুযোগও ছিল। নদিয়ার বাদকুল্লা শ্যামাচরণ শর্ম্ম সরকার দ্বিশত বর্ষ উদ্‌যাপন শাখা কমিটির পক্ষ থেকে একজন প্রশ্ন করেন, ‘এত পাণ্ডিত্য ও কৃতিত্ব থাকা সত্ত্বেও শ্যামাচরণ শর্ম্ম সরকারের নাম কেন আজও বাঙালির কাছে অজানা?’ এর উত্তরে অধ্যাপক দাস বলেছেন, ‘বাঙালির বিস্মৃতি। আমরা ভুলতে ভালোবাসি। কষ্ট করে মনে রাখি না। …’

চা পানের বিরতির পর দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা সাতটায়। প্রথমে হল শ্যামাচরণ বিষয়ক দুটো নাটক সমর ভট্টাচার্য লিখিত ও নির্দেশিত শ্রুতিনাটক ‘ফিরে পাওয়া’ এবং সুবীর দাস পরিচালিত মঞ্চনাটক ‘অন্বেষণ’। এই নাটকের ৬ জন কুশীলবের বয়স ১৫ বছরের নিচে। কী পরিশ্রমে দুশো বছরের অবজ্ঞার ধুলোবালি ঝেড়ে শ্যামাচরণকে বার করে নিয়ে এলেন কয়েকজন যুবকযুবতী! অনেকদিন পর শান্তিপুরবাসী এমন এক শিক্ষণীয় অনুষ্ঠান উপহার পেল।