- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘ইউনিয়নের নেতারা সব টাকা খেয়ে পালিয়েছে’

২৭ জুন, আবেদ আলী, নিউ সেন্ট্রাল জুট মিল, বজবজ#

আবেদ ও তার ছেলের ছবি জিতেন নন্দীর তোলা। ২৭ জুন ২০১৪।
আবেদ ও তার ছেলের ছবি জিতেন নন্দীর তোলা। ২৭ জুন ২০১৪।

২০০৭ সালে আমার আটান্ন বছর হয়ে গেল। তারপর আমাকে রিটায়ার করে দিল। তার আগে ত্রিশ বছর সার্ভিস করেছি। রিটায়ার করে যাওয়ার পরে সার্ভিসের কিছু পয়সা আমি পাইনি। গ্রাচুইটি, পিএফ সব ওরকম পড়ে আছে। পেনশনটা আমি ভর্তি করে রেখেছি। পাশে বজবজ আছে, সিভিয়ট আছে, ওখানে লোকে রিটায়ার করলে আটমাসের মধ্যে পেনশন পেয়ে যায়, এরিয়ার পেয়ে যায়। আমরা পেনশন পাইনি, এরিয়ারের ২০ হাজার টাকা কো-অপারেটিভে আছে। পিএফ-এ আছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা মতো। গ্রাচুইটি আছে। তারপর আমাদের ৪০ টাকা করে এক-একজন শ্রমিকের কাটল, ৭০-৭২ হাজার টাকা কাটল ছ-বছরের এগ্রিমেন্ট করে। ওই পয়সাটা কী হল না-হল জানি না। কাকে বলব? কোম্পানি বলে তো এখানে কেউ নেই। কখনও এ চালাচ্ছে, কখনও ও চালাচ্ছে। লুটপাট করে মেশিনপালা সব নিয়ে পালাচ্ছে। আগে একজন এসেছিলেন, আই বি দত্ত। উনি লোক খুব ভালো ছিলেন। মিলের ছাদ পড়ে যেতে উনি তিনমাস শ্রমিককে বসিয়ে হাফ পয়সা দিয়েছেন। আটমাস আগে ওকে সরিয়ে দেওয়া হল। ইউনিয়নগুলোই এখানে মেইন হচ্ছে দালাল। সবক-টা ইউনিয়ন। নিয়ে এল বি জি বিড়লাকে। ওঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন আছে। কিন্তু বি জি বিড়লা হলেন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। তিনি হপ্তায় একদিন করে আসতেন। ওঁর মেইন ধান্দা কয়েকটা মিল থেকে লোহা সব নেবেন, হাইকোর্ট থেকে রায় পাশ করিয়ে। মেশিনপালা সব বিক্রি করবেন।
আমার ছেলে ওয়ারিশ আলী মিলে ঢুকেছে ২০০৮-এ। ও পার্মানেন্ট নয়। পিএফ কাটা হয় ওর। বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে ২৮০ টাকা করে দিচ্ছে। আর আমার ছেলের মতো এখানকার লোকদের দিচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা।
মিলে ইলেকট্রিক আর জল চালু আছে। এখানে চোদ্দোটা ইউনিয়ন আছে, চোদ্দোটাই দালাল। একমাস আগে একটা ঝামেলা হতে, ওরই মধ্যে ছ-সাতটা, একজন ইউনিয়নের নেতাসহ ভালোরকম পিটুনি খেয়েছে। তারপর যে যার সব টাকাপয়সা নিয়ে পালিয়েছে। এখানে কথাটা হয়েছিল যে পুরোনো মেশিন বিক্রি করে আধুনিকীকরণ করা হবে, চাইনিজ মেশিন নিয়ে আসবে। হেড-অফিসে ওদের ডেকে তিন-চার লাখ টাকা করে হিস্যা দিয়েছে, সেটা পেয়ে যে যার দেশে পালিয়ে গেছে।
আমার বাবা আবদুল শকুর এখানে কাজ করেছেন। বাবা যখন সার্ভিস করেছেন, তখন কোম্পানি ছিল। উইকলি হপ্তা পাওয়া যেত। দরখাস্ত দিলেই লোন-টোন সব পাওয়া যেত। চোদ্দো হাজার লোক ছিল। ১৯৮৬ সালে উনি মারা গেছেন। তখন রিটায়ার করলে দু-সপ্তাহের মধ্যে সব পাওয়া যেত। তার ছেলে আমি এখানে ফেঁসে আছি। আমার মতো বহুৎ লোক ফেঁসে আছে। কত লোক মারা গেছে, পিএফের পয়সা পর্যন্ত পায়নি। গ্রাচুইটি তো দূরের কথা। তাদের বিধবারা বাবুর কাছে আসে। বলে, না এখনও নোটিশ হয়নি। কত বিধবারাও মারা গেছে। ১৯৯৩-৯৪ সাল পর্যন্ত গ্রাচুইটি এখনও রুখে রেখেছে ওরা। মেইন বি জি বিড়লা আর অশোক দেব, তার সঙ্গে ছোটো ছোটো ইউনিয়ন নেতা কতগুলো আছে, এরা মিলে এ অবস্থাটা করছে। এখন কাউকে পাবেন না মিলে, সব পালিয়েছে।