- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘আমি ৯৩ বছরের মিখাইল কালাশনিকভ, … আমিই কি দায়ী … এমনকি শত্রুদের মৃত্যুর জন্য?’

কুশল বিশ্বাস, কলকাতা, ১৫ অক্টোবর। তথ্যসূত্র ইযভেস্তিয়া#

চিঠির অংশ।
চিঠির অংশ।

‘আমার হৃদয় ব্যাথায় ভরে যায়, কিছুতেই উত্তর পাই না যে প্রশ্নের : যদি আমার রাইফেলই মানুষের জীবন নিয়ে থাকে, তবে আমি ৯৩ বছরের মিখাইল কালাশনিকভ, এক কৃষক সন্তান ও বিশ্বাসের দিক থেকে প্রাচীনপন্থী খ্রীস্টান, আমিই কি দায়ী মানুষের, এমনকি শত্রুদের মৃত্যুর জন্য? … হ্যাঁ, আমাদের দেশে চার্চ আর মঠের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু খারাপ তো এখনও যায়নি। ভালো ও মন্দ পাশাপাশি চলে, লড়াই করে। এমনকি তা মানুষের হৃদয়ে একে অন্যের গায়ে ঢলে পড়ে — আমার পার্থিব জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছে আমি এটাই উপলদ্ধি করেছি। এ যেন এক নিরন্তর গতি, যা আমি আমার কম বয়সে আবিষ্কার করতে চেয়েছিলাম। আলো এবং ছায়া, ভালো এবং মন্দ — দুই বিপরীতগুলি কি একে অন্যকে ছাড়া বাঁচতে পারে না? এই কি সর্বশক্তিমানের বিন্যাস? এবং মানবতা কি চিরকাল এর টানাপোড়েনেই রয়ে যাবে?’ —

একটি প্রাচীনপন্থী চার্চকে পাঠানো চিঠিতে এই কথাগুলি লিখে গেছেন মিখাইল কালাশনিকভ। প্রবাদপ্রতিম স্বয়ংক্রিয় কালাশনিকভ রাইফেল (সবচেয়ে জনপ্রিয় একে-৪৭) এর ডিজাইন করেছিলেন মিখাইল। রাশিয়ার এক কৃষক পরিবারে জন্মানোর পর যন্ত্র বানানোর অদম্য বাসনায় একদিন তিনি হয়ে ওঠেন রাশিয়ার এক নম্বর রাইফেল ডিজাইনার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নাজিবাহিনীর হাতে আহত হওয়ার পর বহুদিন হাসপাতালে ছিলেন। তারপর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তৈরি করেন নয়া রাইফেলের ডিজাইন। ২০০২ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তো কৃষি সহায়ক যন্ত্র বানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নাজিদের জন্য আমি যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করতে বাধ্য হলাম।’
১৯৪৭ সালে একে-৪৭ বানানোর পর থেকে তিনি হয়ে ওঠেন পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন রাষ্ট্রের প্রিয়পাত্র। প্রায় সমস্ত উঁচু উঁচু রাষ্ট্রীয় সম্মানে তাকে ভূষিত করা হয়। এমনকি অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র-চুক্তিতেও কালাশনিকভ ছিলেন রাশিয়ার অন্যতম কারিগর। উল্লেখ্য, মার্কিন ভিয়েতনাম যুদ্ধে ভিয়েতনামি সৈন্য কালাশনিকভ রাইফেল ব্যবহার করেছিল।
শেষ বয়সে সাক্ষাৎকারগুলোতে বারবার কালাশনিকভকে প্রশ্ন করা হতো, সন্ত্রাসবাদীরা একে-৪৭ রাইফেল ব্যবহার করছে দেখে কেমন লাগছে। অথবা তার রাইফেল যে এত লোকের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, এর জন্য তিনি নিজেকে দায়ী করেন কি না। এর উত্তরে তিনি বারবারই বলতেন, না, যুদ্ধ তো রাজনৈতিক নেতাদের দায়, তারা শান্তিপূর্ণ পথে সমস্যার সমাধান করতে পারে না, তাই। কিন্তু মৃত্যুর ছয় মাস আগে লেখা চিঠিতে, এমনকি শত্রুদের মৃত্যুর জন্যও নিজেকে দায়ী করে গেলেন গত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ যুদ্ধাস্ত্রের আবিষ্কর্তা এই রাশিয়ান।