- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

আমার ডুয়ার্স ভ্রমণ

আহেলী তপাদার, রবীন্দ্রনগর, সন্তোষপুর, ১৩ আগস্ট#

প্রতিবেদকের ছবিতে চিলাপাতায় নলরাজা দুর্গ
প্রতিবেদকের ছবিতে চিলাপাতায় নলরাজা দুর্গ

আমি আগে জানতামই না যে আমরা ডুয়ার্স যাচ্ছি। মাবাবা আমাকে হঠাৎ চমকে দিল, আমরা ডুয়ার্স যাচ্ছি। আমরা মানে আমি, মা আর আমাদের সাথে মাসি, মেসো আর আমার মাসতুতো দাদাও যাবে। আমরা সবাই মিলে প্রথমে গেলাম হুগলির চুঁচুড়ায়, সেখানে আমার মাসির বাড়ি। সেদিনই ব্যান্ডেল জংশন থেকে আমরা তিস্তাতোর্সা এক্সপ্রেসে উঠলাম। আমাদের নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে বসলাম।

এইখানে বলে রাখি, আমার মাসতুতো দাদার নাম সমন্বয় গুহ। সে ক্লাস ইলেভেনে পড়ে। আমার চেয়ে চার বছরের বড়ো। বড়ো দাদা হিসেবে আমার ওপর সবসময় শাসন করতে চেষ্টা করে। যখন পারে না তখন মারপিট শুরু করে দেয়। যাই হোক আমি ওকে বেশি না ঘাঁটিয়ে ট্রেনে খেয়েদেয়ে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে উঠে মায়ের নির্দেশ মতো ট্রেনেই পরিচ্ছন্ন হয়ে নিলাম। যথাসময়ে ট্রেন নিউ আলিপুর জংশনে এসে থামল। আমরা সবাই নেমে পড়লাম। তারপর স্টেশনের বাইরে এসে রিকশা করে আমাদের হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। হোটেলের রুম আগেই বুক করা ছিল। তাই হোটেলে পৌঁছে আমরা সোজা লাগেজ নিয়ে রুমে চলে গেলাম। আমাদের হোটেলের নাম ‘হোটেল শিবম্‌’। হোটেলটা বেশ পরিষ্কার। আমাদের ঘরের মধ্যে একটা বিশাল জানলা রয়েছে। জানলার পাশেই বাথরুম আর বেসিন। তারপর সোফা, খাট আর টেবিলের ওপর একটা টিভি। জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, বাইরে তেমন কিছু দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না, শুধু একজনের বাড়ি।

প্রথমদিন আমরা গেলাম চিলাপাতা জঙ্গলে। ডুয়ার্সের প্রাকৃতিক দৃশ্য খুব সুন্দর। সকালবেলাতেও চারদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ শোনা যায়। ছায়াঘেরা জঙ্গলটাকে দেখে আমার খুব ভালো লাগল। একটা হুটখোলা জিপ ভাড়া করা হয়েছিল। সেটাতে চেপে আমরা প্রথমেই গেলাম ওয়াচ টাওয়ারে। টাওয়ার থেকে দুটো গন্ডার, একটা ময়ূর আর দূরে একটা হাতি দেখতে পেলাম। হাতিটা এত দূরে ছিল যে দূরবীন দিয়ে দেখতে হল।

ওখান থেকে আমরা গেলাম নলরাজার গড়ে। এটা একটা প্রাচীন গড়, নলরাজার তৈরি। গড়ের উল্টোদিকে একটা গাছ ছিল। তার গায়ে কোপ মারতেই রক্তের মতো কষ বেরিয়ে এল। এই চিলাপাতা জঙ্গলে নাকি ২৮টা এরকম গাছ ছিল। কিন্তু মানুষ ওই রক্তের মতো তরল পদার্থ দেখবার ঝোঁকে দুটো গাছ মেরে ফেলেছে। এখন সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ২৬। সন্ধ্যে হয়ে আসছিল। তাই আমরা হোটেলে ফিরে এলাম। পরদিন আমরা যাব জয়ন্তী।

জয়ন্তী একটা নদীর নাম। সেই নদী পেরিয়ে দেখতে পেলাম মহাকাল মন্দির। এই জায়গাটা পাহাড় দিয়ে ঘেরা বলে আমার চোখে এর সৌন্দর্য্য যেন আরও বেড়ে গেল। নদীর পাশে একটা জায়গায় অনেক বড়ো বড়ো ঘাস আছে, আন্দাজ চার ফুট উঁচু। অনেক গরু এই ঘাস খেতে আসে। তাই বাঘও বেশি আসে এখানে। মহাকাল মন্দিরের ভেতরে একটা পাথরের মহাদেবের মূর্তি আছে।

পরদিন আমরা গিয়েছিলাম বক্সার জঙ্গলে। জঙ্গলে ঢুকে আমরা একটা চিতা বাঘের টাটকা পায়ের ছাপ দেখতে পেলাম। ওর গায়ের গন্ধও পাচ্ছিলাম। কিন্তু চিতা বাঘটাকে না দেখতে পেয়ে দুঃখ হল। কিন্তু আমাদের দুঃখ ঘুচে গেল, দেখি পরপর পাঁচটা হাতি। দুটো বড়ো হাতির সঙ্গে চলেছে তিনটে বাচ্চা। একটু পরেই ওরা চলে গেল। ইস্‌ ওরা যদি আর একটু থাকত আমাদের সামনে।

এবার ফেরার পালা। সেদিন বিকেলেই ট্রেন। তাড়াতাড়ি চানখাওয়া সেরে নিতে হল। ডুয়ার্স ছেড়ে ফিরতে ইচ্ছে করছিল না।