- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘আমরা মেয়েরা কোথাও যেন পারছি না’

অমলেন্দু সরকার, পঞ্চসায়র, পূর্ব যাদবপুর, ৩০ ডিসেম্বর#

অবরোধ চলতেই থাকে, চলতে থাকে সামাজিক অবরোধ। ইদানীং বোরখার প্রবণতা কলকাতাতেও বাড়ছে। আমরা মেয়েরা কোথাও যেন পারছি না; দিন দিন পশ্চাতের দিকে যাচ্ছি — এভাবেই নিজের মতামত প্রকাশ করলেন উত্তরা চক্রবর্ত্তী, প্রেসিডেন্সি বিশ্বাবিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা। ‘প্রযুক্তি’ ব্যবহার করে বর্তমানে ছদ্মবেশী হিংসাকে কিভাবে আটকাব — এইভাবে অসহায়তা প্রকাশ করলেন ডঃ সৈয়দ তানভীর নাসরিন। এই বক্তব্যগুলি উঠে এল ‘সাউথ কলকাতা সোসাইটি ফর এমপাওয়ারমেন্ট অফ উইমেন’ আয়োজিত সভায়। ১৫ ডিসেম্বর ২০১২ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙ্গা হলে আয়োজিত এই সভার বিষয় ছিল — ‘আজকের ভারতীয় নারী  : একটি তুলনামূলক অবস্থান’। সভাতে বাংলাদেশের নারী অন্দোলনের কথা শোনালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ডঃ মালেকা বেগম। তিনি বারবার স্মরণ করালেন মুসলিম নারীর ক্ষেত্রে ধর্মকে উপেক্ষা করার এবং পাশাপাশি তাদের আইনি সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা।
শিক্ষক গিয়াসুদ্দিনের বক্তব্যে উঠে এল — ‘মুসলিম দেশগুলি শরিয়তি আইনের বাইরে বেরিয়ে এসেছে। সেখানে কোর্টের বাইরে তালাক নিষিদ্ধ; বহুবিবাহও নিষিদ্ধ হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে শরিয়তি আইন চালু আছে, আইনি কোনো সুরক্ষা নেই বলেই ফোনে, এসএমএসে-ও তালাক দিচ্ছে মুসলিম পুরুষরা’।
মুর্শিদাবাদের পঞ্চাশ-ষাটটি গ্রামের তালাকপ্রাপ্ত মহিলার তালিকা তৈরি করেছেন সমাজকর্মী খাদিজা বানু। সংখ্যাটা প্রায় ৫০০০। তাঁর মতে, মুর্শিদাবাদ জেলায় এ ধরনের তালাকপ্রাপ্তের সংখ্যা লক্ষাধিক। এরা বেশির ভাগই কোলের বাচ্চা নিয়ে হারিয়ে যায় রাতের অন্ধকারে। মুর্শিদাবাদ জেলা নারী পাচারে প্রথম স্থান অধিকার করে। তিনি বর্তমান রাজ্য সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেন, ইমামদের ভাতা না দিয়ে এসমস্ত নির্যাতিতা মহিলাকে আর্থিক সহায়তা করার। এজন্য অবশ্য তিনি ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ (১৯৭২)-কেও দায়ী করেন। প্রসঙ্গত, মুসলিম সমাজে চার বিয়েকে বৈধ ঘোষণা করেছে ‘মুসলিম পার্সোলান ল’। সবশেষে তিনি বলেন, ১৫০০ বছর আগের উচ্ছৃঙ্খল সমাজকে শৃঙ্খলে আনার জন্য হয়ত এসব সামাজিক নীতির কিছু প্রয়োজনীয়তা থাকতেও পারে, তবে এখন আর এগুলির কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। তাই এদেশে একটি সংস্কার আন্দোলন প্রয়োজন মুসলিম নারী সমাজকে মুক্ত করতে।
‘সাউথ কলকাতা সোসাইটি ফর এমপাওয়ারমেন্ট অফ উইমেন’ –এর তরফে দেশজুড়ে সর্বস্তরের সব সম্প্রদায়ের মানুষের সাক্ষর সংগ্রহ করে ভারত সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট পেশ করতে চলেছে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি নিয়ে। দাবিগুলি হল —
১। তালাক দেওয়ার সম-অধিকার (নারী ও পুরুষের) থাকবে এবং তালাক হবে আদালতের মাধ্যমে
২। একাধিক স্ত্রী (বহুবিবাহ) নিষিদ্ধ করতে হবে
৩। উত্তরাধিকার সম্পত্তির সম-অধিকার দিতে হবে
৪। শ্বশুর বেঁচে থাকাকালীন স্বামী মারা গেলে, সেই বিধবা এবং সন্তানদের উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির অধিকার দিতে হবে
৫। দত্তক আইন চালু করতে হবে
৬। নির্যাতিতা, তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের স্ব-নির্ভর করার প্রকল্প চালু করতে হবে।