- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

আফজল গুরুর প্রেতাত্মা

আফজল গুরুর ফাঁসির দু-বছর হয়ে গেল ৯ ফেব্রুয়ারি। এখনও তাঁর দেহাবশেষ পড়ে রয়েছে দিল্লিতে, তিহার জেলে। বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও তাঁর পরিবারের হাতে দেওয়া হয়নি দেহাবশেষ।

২০০১ সালের পার্লামেন্ট আক্রমণের ঘটনার সাথে জড়িয়ে কাশ্মীরি তরুণ আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়, যদিও তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশি হেফাজতে ‘তাঁর নিজের করা স্বীকারোক্তি’ ছাড়া অন্য কোনো প্রমাণ ছিল না। কিন্ত ফাঁসির সাজা বহাল রাখার সময় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, জাতির সামগ্রিক সন্তুষ্টির জন্য এই সাজা দেওয়া হচ্ছে।

ওই একই মামলায় জড়িয়েছিল দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আরেক কাশ্মীরি, এস এ আর গিলানির নাম। কিন্তু গিলানি বেকসুর খালাস পান। কেউ কেউ অভিযোগ করে, পার্লামেন্ট আক্রমণের অসমাধিত কিছু প্রশ্নের উত্তর ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই আফজল গুরুকে মেরে দেওয়ার দরকার ছিল। এস এ আর গিলানিকেও অভিযুক্ত করা হয়েছিল, যাতে সমস্ত মনোযোগ ‘এলিট’ গিলানির ওপর গিয়ে পড়ে এবং গুরুর ব্যাপারটা মানবাধিকার কর্মীদের নজর এড়িয়ে যায়।

আফজলের স্ত্রী তাবাসুম এই ৯ ফেব্রুয়ারি বলেছেন, গুরুর পক্ষে ভালো কোনো আইনজীবী দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়েছিল কাশ্মীরি নেতারা, বিশেষত বিচ্ছিন্নতাকামী নেতারা। তারা গুরুত্ব দেয়নি গুরুকে। নামকরা ভারতীয় আইনজীবীরা গুরুর হয়ে দাঁড়াতেই চায়নি। যারা দাঁড়াতে চেয়েছিল, তারা হুমকির শিকার হয়ে পিছিয়ে আসে। গিলানি অবশ্য ভালো উকিল পেয়েছিলেন।

সম্প্রতি কংগ্রেস পার্টির টিকিটে জম্মু কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচনে জিতে আসা কয়েকজন বিধায়ক আফজল গুরুর মৃত্যু নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছে এবং তাঁর দেহাবশেষ তিহার জেল থেকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেবার দাবি তুলেছে। সেই প্রসঙ্গে তাবাসুম বলেছে, এগুলো ভণ্ডামি। কাশ্মীরে ভারতীয় আধিপত্য বজায় রাখার জন্য ভারতীয় পার্টিগুলো এরকম ভণ্ডামি মাঝেমধ্যেই করে। উপত্যকাবাসী এগুলো বোঝে।

কাশ্মীরি পার্টি — পিডিপি এবং এনসি-ও একে অপরকে দোষ দিচ্ছে গুরুর ফাঁসির জন্য। এনসি বলছে, পিডিপি-র আমলেই আফজলের গ্রেফতারি, বিচার, সাজা। পিডিপি বলছে, এনসি-র আমলে আফজলের ফাঁসি হয়েছে।

বেঁচে থাকতে ক্ষমতাশালীরা প্রায় কেউই আফজল গুরুর মুক্তির জন্য কিচ্ছু করেনি। কিন্তু মৃত আফজল ‘প্রেতাত্মা’ হয়ে উপত্যকাময় ঘুরে বেড়াচ্ছে, ফাঁসির দু-বছর পরেও। দু-দিন ধরে সেনাবাহিনী কার্ফু জারি করেও বিক্ষোভ থামাতে পারেনি। এক যুবককে গুলি করে মেরে বিক্ষোভ দমাতে হয়েছে।

আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটিকে তাড়া করেছে ওই প্রেতাত্মা।