- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘আপনাদের ওপর আমাদের কোনো বিশ্বাস নেই’

আপনারা খবর নিয়ে যাচ্ছেন আর খবর তো কোনো কাগজে টিভি চ্যানেলে পাওয়া যাচ্ছে না। আপনাদের বি জি বিড়লা আর সরকারের তরফ থেকে পাঠাচ্ছে, আপনাদের টাকা দিচ্ছে আর আপনারা খবর নিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের ওপর আমাদের কোনো বিশ্বাস নেই। ঢপ দেওয়ার অনেক ব্যবস্থা আপনাদের শিখিয়ে দিয়েছে।

এই কথাগুলো একজন শ্রমিকের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে ‘খবরের কাগজ সংবাদমন্থন’-এর সাংবাদিককে। নিউ সেন্ট্রাল জুট মিলে শ্রমিকদের আড্ডায় তিনি এক দুপুরে হাজির হয়েছিলেন।
এটা খুবই আশার খবর যে শ্রমিকদের মিডিয়ার ওপর বিশ্বাস নেই। শ্রমিকেরা জানিয়েছে যে ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের ওপরও তাদের কোনো বিশ্বাস নেই। এই বিশ্বাসভঙ্গের প্রক্রিয়া কবে শুরু হয়েছিল জুটমিলে? আজ নর্থ ব্রুক জুটমিলে ম্যানেজারকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আজ থেকে আড়াই দশক আগে তেলেনিপাড়া ভিক্টোরিয়া জুটমিলে ইউনিয়ন নেতাদের ঝান্ডার রঙ নির্বিশেষে পিটুনি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই বিশ্বাসভঙ্গের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জুট-শ্রমিকের বিশ্বাস করার এক অতৃপ্ত বাসনা, অপরের ওপর নির্ভর করার এক আদত। দেড়শো বছরের বেশি পুরোনো জুটমিলের ইতিহাস শ্রমিকের মধ্যে তৈরি করেছে এই আদত, এই বদঅভ্যাস। বারবার বেইমানি হয়েছে, দালালি হয়েছে, আশাভঙ্গ হয়েছে, তবু সেই আদত থেকে জুট-শ্রমিক নিজেকে মুক্ত করতে পারেনি।
নিউ সেন্ট্রাল জুটমিলের ঢালাইঘর, তাঁতঘর ফাঁকা করে মেশিন উঠিয়ে নিয়ে গেছে বিড়লা-চৌরারিয়ারা। সেইসব শপের ছাদের লোহার শিট পর্যন্ত বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে শ্রমিকদের চোখের সামনে। তবু তার হুঁশ নেই। সে অসহায়।
নেতা, সরকার, লেবার দপ্তর, মিডিয়ার ওপর ভরসা করে তো সে সব খুইয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ৫৯টা জুটমিলের ৫০,০০০ অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক তাদের জমা পাওনাগুলো আজ পর্যন্ত পায়নি। গ্রাচুইটি, পিএফ আর ইএসআই বাবদ ৪০০ কোটি টাকার বেশি মেরে দিয়ে বসে আছে মালিকেরা। মাহেশ্বরীরা খুন হয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে এই খুনি ব্যবস্থাটাকে।
কবে শ্রমিক নিজের ওপর বিশ্বাস করার ঝুঁকি নেবে? কবে আসবে সেই শুভক্ষণ? মাত্র ক-দিন আগে নিউ সেন্ট্রাল জুটমিলের শ্রমিকেরা আলিপুরে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার এসডিও-র কাছে গিয়েছিল নিজেরাই। ইউনিয়ন নেতারা মিল ছেড়ে পালিয়ে গেছে। অগত্যা শ্রমিকেরা ডিপার্টমেন্টগুলো থেকে দুজন করে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল এসডিও-র অফিসে আলোচনার জন্য। এটা একটা ব্যতিক্রম। তবে এরকম ঘটনা ঘটছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। এখনও বিধি হল সেই পুরোনো আদত, ইউনিয়ন-নেতাদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা।
ব্যতিক্রম কবে বিধি হয়ে উঠবে?