- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

আধার কার্ডের ধুয়ো তুলে সরকার গ্যাসের দাম বাড়াতে চাইছে

যখন বেশিরভাগ মানুষ রান্নার জন্য গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, তখন কতকগুলো কথা মানুষের মাথায় গেঁথে দেওয়া হচ্ছে —  তোমাদের আমরা ভরতুকি দিয়ে গ্যাসের সিলিন্ডার দিচ্ছি, অর্থাৎ দয়া করছি! আমরাও যখন মাথায় তা গেঁথে নিলাম, তখন সরকার এক পা এক পা করে এক ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলেছে। প্রথমে তারা বলল, বছরে ভরতুকির সিলিন্ডার ৬টার বেশি পাওয়া যাবে না। তার বেশি লাগলে ভরতুকি ছাড়া রেটে, অর্থাৎ দ্বিগুণ দামে সিলিন্ডার কিনতে হবে। এ নিয়ে সামান্য হইচই (অবশ্যই টিভি-সংবাদপত্রে) করার পর সেই কোটা বেড়ে হল বছরে ৯টা। এরপর সরকার বলল, গ্যাসের ভরতুকি পেতে গেলে আধার কার্ডের তথ্য গ্যাসের সাপ্লায়ারকে জমা দিতে হবে এবং গ্যাসের কনজিউমার নাম্বারকে তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
এমনকী ধুয়ো তোলা হল, আধার কার্ড থাকলেও একই পরিবারের সদস্য বা স্বামী-স্ত্রী একাধিক গ্যাস পাবে না। যদি স্বামী-স্ত্রী কর্মসূত্রে আলাদা আলাদা জায়গায় বাস করে, তাহলে কী হবে? এই প্রশ্ন করলে গ্যাসের ডিলাররা আমতা আমতা করছে।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট একটা অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিল, আধার কার্ড সরকারি ভরতুকি ইত্যাদির জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু ৪২০ টাকার গ্যাস ৯০০ বা ১০০০ টাকায় কিনতে হবে, এটা ভেবেই ভয়ার্ত মানুষ আধার কার্ড করানোর জন্য ব্যগ্র হয়ে উঠেছে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ সত্ত্বেও সরকার মিডিয়ার মাধ্যমে জনমনে একটা ত্রাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।
পাশাপাশি রেশন ব্যবস্থাকে অকেজো করে দেওয়ার সময় থেকেই সরকার একটা প্রচার মিডিয়াকে দিয়ে তুলেছিল, সরকারি ভরতুকি গরিবদের জন্য, উচ্চবিত্তরা কেন রেশনের কম দামে চাল-গম-চিনি-কেরোসিন পাবে? যেন সরকার গরিবদের প্রতি খুবই দয়ালু আর বড়োলোকদের মোটেই রেয়াত করে না!
আসলে সবটাই একটা প্যাঁচ, জনসাধারণকে বোকা বানানোর ফিকির। আমার মনে আছে, ছেলেবেলায় খোলাবাজার থেকে চাল কিনলে বলা হত সেটা বেআইনি। পুলিশ কালোবাজারি আখ্যা দিয়ে চালের কেনাবেচাকে নিয়ন্ত্রণ করত, ধরপাকড় করত। পরে খোলাবাজার আর কালোবাজার রইল না। শেষে রেশনটাও মোটামুটি তুলে দেওয়া হল।
গ্যাসের দাম ইতিমধ্যেই যথেষ্ট চড়া। সরকার তা আরও চড়া হারে বাড়াতে চাইছে। আর চাইছে, আমরা যেন মনের জ্বালা চেপে রেখে ভরতুকি নামক ভিক্ষার দানের জন্য তদবির করি।