• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য

সংবাদমন্থন

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • ২০১২-র আগস্ট অব্দি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

সাধারণের শঙ্কা

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মেয়েটির যৌন হেনস্থা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তারা তিন বন্ধু একটি ফ্ল্যাটে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগে কিছুদিন থাকত। সেই সময় ওই বাড়িতে কাজ করতেন ববিতা। সেই সূত্রে তিনি কিছু কথা বলেন ওই মেয়েটির বিষয়ে, ১৩ অক্টোবর এক ঘরোয়া আলাপচারিতায়।

ববিতা : মেয়েটা ভালো হলে তাকে তো ভালো বলা যায়। কিন্তু মেয়েটা তো ভালো নয়। তোমাদের মতো ভদ্রসভ্য হলে তো বলব। দলের ওপর দল। ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা। গাঁজা খাওয়া, মদ খাওয়া, ছোটো জামাকাপড় পরে ঘোরা, ফেরা। এগুলো তো চোখের সামনে করেছে। এই কারণেই আমি কথাটা বলছি। সে যদি ভালো মেয়ে হবে, স্বাধীনতা মেয়েদের কেন থাকবে না, নিশ্চয়ই থাকবে। কিন্তু স্বাধীনতার মতো কাজ করুক, তবে না থাকবে। একথাই আমি বলেছি। গাঁজা মদ খাওয়া সবই আমি চোখের সামনে দেখেছি। বাড়িতে খাচ্ছে, রাস্তায় খাচ্ছে। খেয়ে ভোর হয়ে বেড়িয়ে পড়ছে। কোনো কিছু বাদ নাই। ওই একটা মেয়ের জন্য হাজার হাজার মেয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আজকে ওই মেয়েটার জন্য কত ছেলে মেয়ে বলছে, কিন্তু আদৌ ওই মেয়েটা তার যোগ্য নয়।

চূর্ণী : ধরে নিলাম মেয়েটা গাঁজা মদ খায়। কিন্তু সেইদিন যদি কিছু ছেলে তার ওপর কিছু করে থাকে, তার জন্য কি সে-ই দায়ী?

ববিতা : সে-ই দায়ী। সে যদি চান্সটা না দেবে, তাহলে ছেলেগুলো চান্সটা পেল কী করে? তুমি যদি তাকে ছাড় না দাও, তাহলে সে কখনোই তোমার থেকে চান্স পেতেই পারে না। তুমি তার সাথ দিচ্ছ বলেই তো সে পাচ্ছে।

সায়ক : এরা তো অচেনা ছেলে।

ববিতা : অচেনা ছেলে, কিন্তু লাইনটা তো ও দেখিয়ে দিয়েছে। তবে না জোর জবরদস্তি করেছে।

চূর্ণী : তুমি কি সেদিন কী কী হয়েছে, তা পরিষ্কার করে জানো?

ববিতা : না, ওখানকার ঘটনা আমি কিছু বলতে পারব না। আমি এটা অন্য দিক দিয়ে বললাম। আমি যেটা চোখের সামনে দেখেছি, সেটা বলতে চাইছি। ঋষাকে বলতে চাইলাম, ঋষা বুঝতে চাইল না। ও বলল, মেয়েরা কেন স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারবে না। মেয়েদের স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারা না পারা, এর সঙ্গে এখানে কিছু আসছে যাচ্ছে না। ছেলেদের লাইটা কে দিচ্ছে? মেয়েরাই দিচ্ছে। তবে তো ছেলেরা এত চান্সটা পায়। নাহলে কোথা থেকে পেল? ছোটো ছোটো জামা পরে যাওয়া, তাদের সঙ্গে মদ খাওয়া। তাদের সঙ্গে একসঙ্গে চলা। তাদের সঙ্গে … যে হিসাবে ঘটনাটা ঘটে গেছে, সেই হিসেবে ছেলেদের সঙ্গে করা। এবার আরও পাঁচটা ছেলে দেখে নিচ্ছে ঘটনাটা। তারা ভাবছে, মেয়েটা তো ওই লাইনেই চলে গেছে, তাহলে আমরা করতে পারবো না কেন? ওই জন্যই ছেলেগুলো ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এবার ওই মেয়েটার জন্য তোমরা আন্দোলন করছ, দোষটা তো ওই মেয়েটার একা হচ্ছে না, সব মেয়েদের হচ্ছে। তাহলে মেয়েরা স্বাধীনতাটা পেল কোথা থেকে? রাস্তার মধ্যে ছোটো জামা পরে সিগারেট টেনে যদি যায়, পাঁচটা ছেলে যদি দাঁড়িয়ে থাকে, তারা যদি টোন কাটে, তাদের দোষ? তাদের তো নয়। টোন কাটার লাইনটা তো তোমরাই দেখিয়ে দিচ্ছ। তবে তারা টোনটা কাটছে। স্বাধীনতা দেবে না কেন, দাও। কিন্তু তোমরা তোমাদের মতো থাকো। তাহলে তোমাদের স্বাধীনতাতে কেউ তো বারণ করছে না।

ঋষা : আমি যেটা বলছিলাম সেটা হচ্ছে যে, ধরো একজন মদ গাঁজা খায়। এবার মদ গাঁজা খাওয়ার সমস্যাটা কোথায়? সমস্যাটা কি এটাই যে সে একদম সেন্সে থাকছে না? সে নিজের বোধবুদ্ধিগুলো হারিয়ে ফেলছে এবং হারিয়ে ফেলছে বলে তার সাথে খারাপ ঘটনা ঘটছে?

ববিতা : সুযোগটা তো তুমি দিচ্ছ, তবে সে সুযোগটা পাচ্ছে।

ঋষা : মদ গাঁজা ছেলেরা খেতে পারে আর …

ববিতা : না না তারাও খেতে পারে। কিন্তু খেয়ে ফেলে তুমি নিজেই যে নিজেকে ঢেলে দেবে সে হুঁশ তো তোমার মধ্যে আসছে না। কিন্তু তুমি যখন ঢেলে দিচ্ছ, সে কেন নিতে পারবে না?

ঋষা : কিন্তু খারাপ কোনটা? মদ গাঁজা খেয়ে বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলাটা ছেলেদেরও খারাপ, মেয়েদেরও খারাপ। ছেলেদের যদি বোধবুদ্ধি হারিয়ে যায়, তাহলে তারাও তো ওরকম অনেক কিছু করতে পারে। যেরকম ওই যে বারাসতে একবার হল, মনে আছে? একজন ভাই আর একজন বোন যাচ্ছিল রাত্রিবেলা। নিউ ইয়ারের সময় বোধহয়। মেয়েটি কাজ করে ফিরছিল, সে মদ গাঁজা কিছুই খায়নি। সে খুব সাধারণ আর কি। তোমাদের মতো। তখন কিছু ছেলে মদ গাঁজা খেয়ে তাকে রেপ করার চেষ্টা করে এবং ভাইটিকে মেরে দেয়। তাহলে মদ গাঁজার ব্যাপারটা হচ্ছে, মদ গাঁজা সবার ওপরই এফেক্ট করে। ছেলেদের ওপরও এফেক্ট করে, মেয়েদের ওপরও এফেক্ট করে। সেটা খেয়ে একটা ছেলেও ভুল কাজ করতে পারে, একটা মেয়েও ভুল কাজ করতে পারে। কিন্তু তুমি যেটা বলছ, মেয়েটা যেহেতু মদ গাঁজা খেয়েছিল, ছেলেদের সঙ্গে একই চক্করে, মানে ছেলেরাও খাচ্ছে, মেয়েরাও খাচ্ছে, সেইটা একটা খারাপ ব্যাপার। মদ গাঁজা খেয়ে সবাই যে জ্ঞান হারাচ্ছে সেটা খারাপ নয়, ছেলেরা যে …

ববিতা : সেটা তো জোরজবরদস্তি। আমি কিন্তু সেটা বলিনি। আমি বলেছি, তুমি মদ গাঁজা খেয়ে একটা ছেলের সঙ্গে রাস্তায় ওসব করছ, এবার অন্য ছেলেরা দেখে নিচ্ছে। তারা ভাবছে আমরাও করি। ও তো একটা লুজ মেয়ে। কথাটা তো এইভাবেই আসছে। তাকে তো ছেলেরা টার্গেট করবে, কারণ তার হয়ে তো কেউ বলতে যাবে না। পাঁচজন জেনে যাচ্ছে জিনিসটা। পাঁচটা গ্রাম থেকে ছেলে আসছে। এবার তারা দেখে দাঁড়িয়ে পড়বে। দাঁড়িয়ে পড়ে নিজেদের মধ্যে কিছু একটা আলোচনা করল। এবার আলোচনাটা ওর কানে পৌঁছাল। এবার ও ঘুরে দাঁড়ালো, তুই কেন বললি? সে নিজে যে কী করেছে সেটা দেখছে না। প্রশ্নটা তো এভাবেই আসছে। মেয়েরা স্বাধীনতা পাবে না কেন? মেয়েদের আত্মগণ্ডীর মধ্যে থেকে স্বাধীনতা। তুমি মদ গাঁজা খাও। কিন্তু সমাজ বলেনি যে তুমি রাস্তায় ছেলেদের মতো মদ গাঁজা খেয়ে ঘুরে বেড়াও স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে বলে। সে কথা তো বলেনি। বলেছে কি? মেয়েরা না খাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু ছেলেরা খেয়ে মেয়েদের ওপর ঠেলে পড়বে, মেয়েরা খেয়ে ছেলেদের ওপর ঠেলে পড়বে, সেটা যাতে না হয় সে কথা বলেছি। রাস্তায় আমাদের চোখে পড়ে যায়, মেয়েরা এমন বেসামাল হয়ে চলে কী আর বলব।

ঋষা : ধরো একজন মাতাল, রাস্তায় ছেলেদেরকেও তো মাতাল অবস্থায় পাওয়া যায়।

ববিতা : ছেলেদের পাওয়া যায় বলেই যে তোমাকে পাওয়া যাবে, তার কোনো মানে নেই।

ঋষা : ছেলেদের মাতাল অবস্থায় দেখে কম খারাপ লাগছে, আর মেয়েদের মাতাল অবস্থায় দেখে বেশি খারাপ লাগছে …

ববিতা : কারণ আমি তো নিজে মেয়েমানুষ। আমি নিজে মেয়েমানুষ, ওজন্যই তো সমস্যাটা।

মনা : আমাদের মতো পরিবারে ছেলেদের নেশা করা, মেয়েদের নেশা করা একভাবে হয়। কিন্তু ববিতারা যে পরিবেশে থাকে, সেখানে অন্যরকম। আমি ওখানে অনেকদিন কাজ করেছি, করে দেখেছি — ওখানে ছেলেরা, বিশেষত পুরুষরা প্রত্যেকটা সংসারে নেশা করার জন্য সংসারটার প্রতি কোনো দায়-দায়িত্বই থাকে না, এর সাথেই স্ত্রীর পুরো দায়িত্ব থাকে বাচ্চাগুলো যাতে না নষ্ট হয়। ওরা কিন্তু এই জিনিসটাকে খুব মোকাবিলা করে। প্রত্যেকটা দিন ওদের এপাশে ওপাশে পরিবারে অশান্তি হচ্ছে, কী না, মদ খেয়ে এসেছে। ওরা এই জিনিসটা দেখে দেখে না, ওদের এই নেশার প্রতি, নেশায় বেসামাল হয়ে পড়ার প্রতি … ওরা এটা বেশি দেখে। ফলে ওরা এটা একদমই মেনে নিতে পারছে না।

ববিতা : সংসারের কোনো দায়িত্ববোধ আর থাকে না।

চূর্ণী : ববিতাদি মেয়েটিকে ব্যক্তিগতভাবে চেনে বলে কথাগুলো বলছে বটে, কিন্তু এই কথাগুলোই কিন্তু এদিক ওদিক থেকে প্রচুর উঠছে।

ববিতা : ছেলেরা আর মেয়েরা সমান বললেও ছেলেরা মেয়েদের সমান হবে কী করে? ছেলেদের গায়ে যতটা শক্তি আছে, মেয়েদের গায়ে ততটা শক্তি নেই। তুমি যদি বলো যে হ্যাঁ, আমার আছে, তাহলে হবে না। ঋষা মেয়েদের ছেলেদের সমান করছে, কিন্তু ছেলে মেয়ে সমান কখনো হয় না।

জিতেন : আমার মনে হচ্ছে ববিতা যেটা বলতে চাইছে, বারাসতের মেয়েটার জন্য লড়া যায়, কিন্তু এই মেয়েটার জন্য লড়া যায় না। ঋষা তো তা মনে করছে না। ঋষা এই আন্দোলনের যুক্তিটা বলুক।

ঋষা : যেটা আমরা সবাই অনুভব করছি, শুধু যাদবপুর নয়, আশেপাশের আরও অনেক জায়গাতেই এরকম ঘটছে। বোঝা যাচ্ছে, এই যে একটা বিষয়, যেমন বিশ্বভারতীর কলাভবনে যে ঘটনাটা ঘটল, তারপর প্রথম যে সার্কুলারটা জারি করা হয়েছে — মেয়েদের হস্টেলের গেট খোলা থাকার সময়টা আরও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেটা ন-টা ছিল, সেটা সাতটা করে দেওয়া হয়েছে। ছেলেদেরটা চিরকালই বারোটা একটা অবধি খোলা থাকে, ওটা খোলাই আছে। ওর ওপর কিছু জারি হয়নি। তুমি তো বলছ যে মেয়েদেরকে রেস্ট্রিক্ট করা উচিত, তাই ন-টা অবধি বাইরে থাকা কমিয়ে সাতটা করছ। যাতে মেয়েরা রাতে বাইরে না বেরোয়, সেটা তাদের নিরাপত্তার প্রশ্ন। যে কেউ যে কোনো সময় তুলে নিয়ে যেতে পারে, সমস্যা করতে পারে। সেজন্য মেয়েদের ওপর এটা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তো, কিন্তু তা খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না। মেয়েরা রাস্তায় না বেরোলে, মদ গাঁজা না খেলে যে রেপ ব্যাপারটা বন্ধ হয়ে যাবে বা মলেস্টেশন ব্যাপারটা বন্ধ হয়ে যাবে, তা কিন্তু ঠিক নয়। যাদবপুরের ব্যাপারে আমাদের এই মানসিকতা থেকেই যুক্ত হওয়া, সবসময় তুমি মেয়েদের ওপর রেস্ট্রিকশনটা চাপালে হবে না। মেয়েদের ওপর তুমি যত রেস্ট্রিকশন চাপাবে, ততই কিন্তু ফাঁকটা বাড়তে থাকবে। তাই না? তুমি একটা দিক বন্ধ করলে তো আরেকটা দিক খুলে যাচ্ছেই। ছেলেরা তো আরও আরও আরও আরও স্বাধীনতা পাচ্ছে। এটা কি কোনোভাবে একবারের জন্যও মনে হচ্ছে না যে একবার ছেলেদেরকেও বোঝানো দরকার, তোমার এটা লিমিট। যেমন মেয়েরা বুঝছে, এটা তাদের লিমিট। ন-টা নয়, সাতটাতে লিমিট। তেমনি ছেলেদের কি বোঝার দরকার নেই, এইটা আমার লিমিট, আমি এর বেশি এগোতে পারি না? এটা ছেলেদের দিক থেকেও তো বোঝার দরকার। তুমি শারীরিকভাবে অনেক সক্ষম বলে শারীরিকভাবে দুর্বল মেয়েদের ওপর অত্যাচার করবে, এটা তো ভুল।

ববিতা : না, এটা তো ভুল।

ঋষা : যেমন তোমাদের বাড়িতে বাড়িতে সব বরগুলো মাল খেয়ে এসে বউদের পেটায়, সেটা তো আলটিমেটলি ঠিক নয়।

ববিতা : ঠিক নয়, সেটা তো কেউ আটকায়নি, সেটা তো বরাবর আগে থেকে করে এসেছে। এখন ফট করে গিয়ে আটকাবে, আটকানো তো সঙ্গে সঙ্গে যাবে না।

ঋষা : সেখান থেকে শুরু হওয়া দরকার তো। লিমিটের কনসেপ্টটা যদি থাকে, মানে কাউকে যদি বাঁধার একটা পরিকল্পনা করা হয়, বাঁধাটা দু-দিকে কেন হবে না, কেন একদিকেই হবে।

ববিতা : দু-দিকে হবে না কেন, কমবেশি করে করতে হবে। দু-দিকেই হবে… ছেলেরা তো হাফপ্যান্ট পরে খালি গায়ে বেরোতে পারবে, তুমি কি আর তা পারবে?

ঋষা : হয় দু-দিকেই বাঁধা থাকুক, অথবা কোনোদিকেই বাঁধা থাকবে না।

… … …

জয়তী : … ছেলেদের গায়ের জোর বেশি আর মেয়েদের গায়ের জোর কম, এরকম একটা ধারণা আছে। বিতর্কিত ধারণা। এই বনগাঁ লোকালে ধরো অনেকেই যাতায়াত করি। সেখানে তো একদম গ্রাম থেকেই মহিলারা আসেন। বিশাল বড়ো বড়ো ঝুড়ি মাথায় নিয়ে আসেন। আমি অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি যে তাদের কাছে হয়তো টিকিট নেই। তারা তখন কিন্তু ছেলেদের মতো করেই, কোনো অস্বস্তিতে না পড়েই যেদিকে স্টেশন তার উল্টোদিকে একইভাবে নামতে পারে। মেয়েদের তো মাসিকের অসুবিধা থাকে, শরীর খারাপ থাকে। সেটাকে নিয়েই তো তারা অত সাঙ্ঘাতিক একটা বড়ো ঝুড়ি নিয়ে, তাতে সবজি থেকে শুরু করে নানা কিছু থাকে, ওভাবে নামতে পারে। তাই প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে না কি যে সত্যিই কি মেয়েদের জোর এতটাই কম?

ববিতা : আমি ওইদিক থেকে কথাটা বলিনি। তুমি ভুল বুঝছ। ছেলেদের এবং মেয়েদের মধ্যে কিছু ডিফারেন্স আছে। এই ডিফারেন্স-এর জন্যই আমি কথাটা বলেছি। … শারীরিক খাটুনির দিক দিয়ে মেয়েরা এখন কম কোনো জায়গায় নেই, বরঞ্চ ছেলেরা কমজোরি হয়ে গেছে।

ঋষা : ববির কথার মধ্যে একটা খুব পজিটিভ দিক আমি দেখতে পেয়েছি। সেটা হচ্ছে যে, মেয়েরা নিজেরা নিজেদের প্রটেক্ট করার যে ব্যাপারটা, সেটা আমি নেশার জায়গা থেকে বলছি না, কিন্তু আমি যে আমাকে প্রটেক্ট করব, সেটা কিন্তু একরকমভাবে পুরুষদের ওপর নিজেদের নির্ভরশীলতাকে কাটিয়ে। ববিদের পাড়ার স্ত্রীরা কিন্তু খুব নিজেদের ওপর নির্ভরশীল। তারা নিজেরাই রোজগার করে, নিজেরাই খায়। ওই কনসেপ্টটা যদি অ্যাপ্লাই করা যায়, তাহলে …। আমি দেখেছি, আমাদের কলেজের অনেক ছাত্রী, তারা কিন্তু ববিদের থেকেও অনেক বেশি পিতৃতান্ত্রিক, কারণ পুরুষদের ওপর নির্ভরশীল। আমাকে যে কেউ ধর্ষণ করবে না, তার দায়িত্ব যে আমারই, সেটা মদ গাঁজার বিষয় নয়, আমার দায়িত্ব যে আমাকে কেউ ধর্ষণ করবে না। আমি নিজে নিজেকে রক্ষা করব, অন্য কেউ এসে আমাকে রক্ষা করে দেবে না, এই ভাবটা কিন্তু ববির কথার মধ্যে আছে। সেটা ঠিক বেরিয়ে আসছে না।

যাদবপুরে যেটা সমস্যা, মানে আমি দেখেছি — যারা অত যে মহামিছিল হয়েছে, অত লোক যে হেঁটেছে, তাদের মধ্যে যদি এরকম র‍্যানডাম লোককে জিজ্ঞেস করা হয়, তাদের মধ্যে ম্যাক্সিমাম লোক হেঁটেছে, যে পুলিশ কেন ছাত্রছাত্রীদের মেরেছে। যাদবপুরের ওই অ্যালেজড মলেস্টেশনের প্রথম বিতর্কটাই তৈরি হয়েছিল ওই মানসিকতা থেকে। মানে আদৌ কি মলেস্টেশন হয়েছে? এটা কেউ কখনো ভাবেনি, যে, একটা ঘটনার বিভিন্ন ইন্টারপ্রেটেশন থাকতে পারে। যার সাথে মলেস্টেশন হচ্ছে, তার মনে হতে পারে এটা মলেস্টেশন। যে মলেস্ট করছে, তার মনে হতে পারে, এটা মলেস্টেশন নয়। ইন্টারপ্রিটেশনের প্রশ্নটা থেকেই একটা আনবায়াসড কমিটি গঠন করে তদন্ত করার দাবিটা উঠেছিল। এবার ইন্টারপ্রেটেশনের ক্ষেত্রেই মানসিকতাটা কাজ করে। যে তুমি কীভাবে ইন্টারপ্রেট করছ। আমি যখন শুনছি যে একটা এরকম ঘটনা ঘটেছে, আমি নিজের খুব কাছের লোকদের দেখেছি, তারা এরকম ফেসবুকে স্টেটাস দিয়েছে, ‘ডিয়ার গার্লস, টেক কেয়ার অফ ইয়োরসেলভস অ্যান্ড ইয়োর ড্রাঙ্কস’। মানে যখন তারা নিজেরা প্রচণ্ড নেশা করে, তারা নিজেরাও অনেকসময় সেন্স হারিয়ে ফেলে প্রায়, সেই মানুষগুলো স্টেটাস দিয়েছে যে তুমি যখন মেয়ে তখন তোমার মদ্যপ অবস্থায় নিজেদের সচেতন থাকা উচিত। এবং তাদেরকে আমি আবার পরে মহামিছিলে দেখেছি। তো নেগোশিয়েশনের ব্যাপারটা অনেক … আমরা যেমন বলছি না, যে ববিতা পিসি বা এরা কেউ সচেতন নয় বা এরা ঠিক আমাদের এই ইকুয়ালিটির কনসেপ্টটাকে ধারণ করে না, এদের নিজস্ব কিছু নেগোশিয়েশন থাকে। যেমন, আমি একবার পড়েছিলাম, ডলি বাসুর একটা ইন্টারভিউ পড়েছিলাম, সেখানে ও লিখেছিল যে এরকম জ্যোতি বসু ওকে, মানে ও তো জ্যোতি বসুর পুত্রবধূ ছিল, তাকে জ্যোতি বসু সিঁদুর পরাতে দিত না। এবার একটি মেয়ের যদি মনে হয়, যে সে সিঁদুর পরবে, এবং তাতে যদি তার একটা বিশেষ শান্তি হচ্ছে, হ্যাঁ সেই শান্তিটা সোশালি কনস্ট্রাক্টেড হতে পারে। অবশ্যই সেটা সোস্যালি কনস্ট্রাকটেড, তোমাকে বড়ো করা হচ্ছে, এবং বলা হচ্ছে যে তুমি সিঁদুর পরলে তোমার স্বামীর অনেক দিনের আয়ু বাড়বে। এবার সে যদি ওই কনস্ট্রাকটেড জিনিসটাও নিতে চায়, তাহলে একটা অ্যান্টি-প্যাট্রিয়ার্কি তাকে আটকাচ্ছে কেন? এইটাও একটা অপ্রেশন। শ্বশুর তার পুত্রবধুকে বলছে, তুমি সিঁদুর পরতে পারবে না। কারণ তার নিজস্ব ইডিওলজির জন্য। তো নেগোশিয়েশনগুলো ঠিক ওরকমভাবেই … মানে, তুমি ছোটো জামাকাপড় পরছ, প্রতিবাদ করছ। তুমি সিগারেট খাচ্ছ, প্রতিবাদ করছ, ঠিক তা নয়। আর যাদবপুরের এই ব্যাপারটা কেন এত এলিয়েনেটেড? কারণ, যাদবপুর এই একটাই পন্থাকে দেখেছে। আমরা বিশেষত, এই পন্থাটাকেই দেখি যে, সচেতনতা বলে একটা ব্যাপার আছে, এদেরকে বুঝতে হবে, ইকুয়ালিটির একটা কনসেপ্ট আছে। কিন্তু ইকুয়ালিটিটা … প্রত্যেকটা মানুষ স্বাধীনতার জন্য ফাইট করছে। ওরা কি করছে না? কেন তাহলে ওরা বাইরে কাজ করতে যাচ্ছে? একদম ওই কারণেই। তো ওই ব্যাপারগুলোকে একদম নেগলেক্ট করে, একটা একটা ভীষণ মোটাভাবে ইমপোজ করা যে তুমি এটা করো …। নেগলেক্ট করা মানে একদম রেকগনাইজ না করা যে এটাও একটা নেগোশিয়েশন। এটাও একটা ফাইট। ফাইট শুধু এক রকমেরই হবে ঠিক তা নয়। এরাও অনেকভাবে এই পুরুষতন্ত্রের সাথেই ফাইট করছে। কিন্তু আমরা একটা খাঁচা ধরে রেখেছি। ববি যেটা প্রটেস্ট করছে যে মেয়েরা সিগারেট কেন খাবে, এবং আমাদের এটা খুব লাগছে যে কেন খাবে না। এই খাঁচাটা যে সিগারেট …। মানে নরম্যাল বলে একটা ব্যাপার আছে। যাদবপুরের নর্ম-টা কিন্তু সোসাইটির অ্যান্টি-নর্ম। এই অ্যান্টি নর্মটাকে চ্যানেলাইজ করে নর্ম করাটা কিন্তু আন্দোলনটার উদ্দেশ্য নয়। আমাদের কারোর মানসিকতা কিন্তু তা নয়। ওই অ্যান্টি-নর্মটা যদি নর্ম হয়, তাহলেই সোসাইটিতে একটা ইকুয়ালিটি চলে আসবে, ঠিক তা নয়।

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সম্পাদকীয়

একটি রাজনৈতিক সুইসাইড নোট

কালোবাজারি মূল্যবৃদ্ধি, বাজারি মূল্যবৃদ্ধি

এই বিভাগের আরও

দেশের খবর

গরমের বলি : টানা এগারো দিন ধান কাটা ঝাড়া, মাঠেই পড়ে রইল জনখাটা স্বরূপ

আদিবাসী কুড়মি সমাজের তিন জেলায় একদিনের অনশন

এই বিভাগের আরও

পথের খবর

ভোটের রিপোর্টে যা যা যাবে না

দমদম স্টেশনে একটি বাচ্চার জন্মের পর …

এই বিভাগের আরও

খবরে দুনিয়া

বিনা বিচারে আটক প্যালেস্তাইনি সাংবাদিক টানা ৬৩ দিন ভুখ হরতালে

নেপালে রক্সৌল-বীরগঞ্জ সীমান্তে অবরোধ হটাতে পুলিশের গুলিতে এক নিরীহ ভারতীয় যুবক হত, কার্ফু জারি, জনতার নাভিশ্বাস

এই বিভাগের আরও

সংস্কৃতির হাল

বাঁকুড়ার শিশুদের মাঝে কলকাতার “স্বভাব” নাট্য দলের নাটক “হাত ঘোরালেই গল্প”

সুমি……… একটি মেয়ের নাম

এই বিভাগের আরও

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

অনুসন্ধান করুন

খবর নিন

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries RSS
  • Comments RSS
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • Sumana Mazumder on কোচবিহারে রূপান্তরকামী মানুষদের উদ্যোগে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন — ‘রবির আলোয় ঋতু’
  • পার্থ সারথি বিশ্বাস on সতীপীঠ অট্টহাস
  • Amitava Dutta on ‘সাবঅল্টার্ন কথা বলতে পারে, কথা বলছে; আপনারা শুনতে চান তো?’
  • রাজেশ মাহাতে on ‘আদিবাসীদের দাঁশাই ও কাঠি নাচ দুর্গোৎসবের বিপক্ষের নৃত্য’

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in