- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

তপ্ত কলকাতা : হালতু গড়ফা পালবাজারের বাজার এলাকা বৃক্ষশূণ্য, দোকান আর ফ্ল্যাটে পূর্ণ

শ্রীমান চক্রবর্তী, হালতু, ১১ মে#

সুকান্ত সেতুর পাদদেশ থেকে পালবাজারের মোড়। বাসটা যেখানে ঘুরছে। কোনো গাছ নেই এদিক ওদিক কোনোদিক। ছবি শমীক সরকারের তোলা। ৭ মে।
সুকান্ত সেতুর পাদদেশ থেকে পালবাজারের মোড়। বাসটা যেখানে ঘুরছে। কোনো গাছ নেই এদিক ওদিক কোনোদিক। ছবি শমীক সরকারের তোলা। ৭ মে।

এবারের গরমে একটু বেলা হতেই বাজারে যেতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। কষ্ট হচ্ছিল কোন গাছের তলায় দাঁড়িয়ে একটু জিরিয়ে নিতে না পারার জন্য। যদিও হালতু বাজারের পোস্ট অফিসের মোড়ের দিকে দু’একটা গাছ থাকায় অনেক বেলা অবধি ছায়া পাওয়া যায়। আর সর্বত্রই চড়া রোদ।

বাজারের ভিতরে জিনিসের দাম একটু চড়া হওয়ায় অনেকেই রাস্তার ওপরে বসা দোকানিদের থেকেই বাজার করে। আমিও। এদিকে রামলাল বাজারের কোথাও একটু দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নেবার জায়গা খুঁজে পাওয়া যায় না। একমাত্র বাজারে ভিতরে কর্পোরেশনের বাজার ছাড়া আগে এই বাজার গুলির অনেক দিকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ কিছু গাছ ছিল। আমার ছোটবেলার স্মৃতি তাই বলে। আগে বাজারের  মধ্যে দুপুরের দিকে যে আইসক্রীম, আচার, আখ  বিক্রি করতো তারা প্রত্যেকেই এক একটা গাছের তলা বেছে নিত। রোদের থেকে গা বাঁচাতে। এমনি যারা পেয়ারা,কামরাঙ্গা, সবেদা, আমড়া নিয়ে বসতো তারাও কোন একটা গাছের ছায়া খুঁজে নিত। আজ কিন্তু দুপুরের রোদে এই বাজার গুলিতে আর তাদের দেখা পাওয়া যায় না। তারা স্কুলের গেটের কাছেই শুধু বিক্রি করে। সেদিনের গাছগুলো আর নেই। নেই সেই বিক্রিয়ালারাও।

গড়ফা মেন রোড থেকে পালবাজারের মোড়। বড়ো আলোর স্তম্ভটি মোড়। বাঁদিকে কর্পোরেশন অফিসে টিঁঁকে আছে একটি গাছ, যার পাতা দেখা যাচ্ছে। আর কোনো গাছ নেই কাছে পিঠে। ছবি শমীক সরকারের তোলা। ৭ মে ২০১৬।
গড়ফা মেন রোড থেকে পালবাজারের মোড়। বড়ো আলোর স্তম্ভটি মোড়। বাঁদিকে কর্পোরেশন অফিসে টিঁঁকে আছে একটি গাছ, যার পাতা দেখা যাচ্ছে। আর কোনো গাছ নেই কাছে পিঠে। ছবি শমীক সরকারের তোলা। ৭ মে ২০১৬।

আমি এবার গরমের শুরু থেকেই বাজারে যেতে চাইছিলাম অন্ততঃ সকালের দিকে। কিন্তু নিজের ভুলো মন আর পেটের তাগিদে সেই রোদেই বেরোতে হতো। আর আমি কেবল ছায়া খুঁজতে থাকি একটু দাঁড়াবার জন্য। বাজার করি সেখান থেকে যেখানে একটু ছায়া রয়েছে। এইভাবে অসহ্য গরমে কষ্ট পাই আর ভাবি যদি এই বাজারের রাস্তার ধারে আগের মতো গাছগুলি থাকত, তাহলে বোধহয় সকলের সুবিধেই হতো। বিশেষত বাস রাস্তার ওপরে বাজার করতে ভীষণ কষ্ট হয়।

এবারে গরমে কষ্ট প্রত্যেক বারের মতই একটু একটু করে বেশি লাগছে। আশেপাশের বাড়ি আর ফ্ল্যাটগুলিতে একের পর এক এসি লাগানোয় আমাদের ঘরগুলিতে তাই গরম একটু বেশি। এখন যেখানে থাকি সেখানে গায়ে গা লাগিয়ে সব ফ্ল্যাটগুলি উঠেছে তাই হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা প্রায় নেই। আর গাছের দেখা প্রায় নেই বললেই চলে। অদ্ভুত এক এক কংক্রীটের মরুভূমি হয়ে গেছে আমার সেই ছেলেবেলার হালতু।

সেদিন ভোর বেলায় বেরিয়ে ছিলাম গরফা মেন রোড ধরে কোথায় কেমন গাছ রয়েছে তার বর্তমান হাল হকিকৎ বুঝতে। হালতু মোড় থেকে যেতে যেতে দেখলাম হালতু বাজারের রাস্তাটায় কোথায় একটা বড় গাছ নেই। পোস্ট অফিসের দিকে মোড় ঘুরতে দুটো বড়ো গাছ একটা বাড়ির গা বেয়ে ওঠায় ওই জায়গায় দোকানগুলো একটু গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসেছে। এরপর কায়স্থপাড়া আগে ডানদিকে একটা বড়ো পুকুরের গায়ে দু-একটা গাছ ছাড়া আর কোথাও কোনো গাছের দেখা নেই। কায়স্থা পাড়া মোড় থেকে নন্দীবাগানের এস ডি-৮ বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত কোনও গাছের দেখা নেই। আবার শীতলা মন্দির থেকে সাপুইপাড়া পর্যন্ত কোন বড়ো গাছ রাস্তার আশে পাশে চোখে পড়ল না। দু’একটা বাড়ির ভেতরে আম গাছ আর নিম গাছ দেখতে পেলাম এই গোটা রাস্তায়।

সাঁপুইপাড়া পেরিয়ে চেনা বট গাছটি এখনো যেন এই অঞ্চলের সবের ধন নীলমণি। এস ডি-৪ বাস স্টান্ডের আগে আর স্টেট বাঙ্কের কাছে দু’একটা গাছ চোখে পড়ল, আর কিছু গাছ চোখে পড়ল খালের ধারে কয়েকটি বাড়ির গায়ে। বাকি গরফা শিব মন্দির এলাকার বাজারের আগে বড়ো কোনো গাছই নেই। তিন চার জায়গায় রাস্তার পাশে বেদীর মতো বসার জায়গায় ছাতিম আর কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখতে পেলাম আর কয়েকটি বাড়িতে এরিকা পাম আর সুপারি গাছ। এর পর ১২ নং বোরো অফিসের কাছে দু-একটা গাছ চোখে পড়ল। আর কোথাও চোখে পড়ল না সেরকম বড়  কোনও গাছ। যাদবপুর সংস্কৃতি চক্র, পালবাজার মোড় পর্যন্ত কোন গাছের দেখা নেই। নেই কোন গাছের ছায়া। সমস্ত গরফা মেইন রোড ধরে গজিয়ে ফ্ল্যাট আর বাজার দোকানের দাপটে গাছের দেখা কেবলই গুটিকয়েক টবে। সমস্ত জায়গাটাই হয়ে গেছে কংক্রীটের মরুভূমি।

গড়ফা মেন রোড। বৃক্ষহীন। ছবি শমীক সরকারের তোলা। ৭ মে ২০১৬।
গড়ফা মেন রোড। বৃক্ষহীন। ছবি শমীক সরকারের তোলা। ৭ মে ২০১৬।