- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘চলো তো, আর ডাক্তার দেখাতে হবে না, আজ তোমাকে মেরে আমি রেলে গলা দেব’

দীপা ভট্টাচার্য্য, হালতু, ১৩ সেপ্টেম্বর#

saroj-gupta-hospital
বুধবার ২৬ আগস্ট আমি ঠাকুরপুকুরে সরোজগুপ্ত ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড ক্লিনিক-এ ডাঃ রাকেশ রায়ের কাছে দেখাতে নিয়ে যাই আমি স্বামীর কেমোথেরাপির বিষয়ে কথা বলার জন্য। আমার সাথে ছিল অলোক। ডাক্তারবাবু আমাদের বেলা ১টার সময় যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আমরা দু’জনে ওখানে ১২টা-১৫তে পৌঁছে, হাসপাতালের সবুজ বই আউটডোর রোগীদের বিল্ডিং-এর দোতালায় ২১০ নম্বর ঘরের সামনে একটা কার্ড বোর্ডের বাক্সে জমা দিই। আমি যখন কার্ড জমা দিই তখন আমার সাথে আরো একজন লাল রঙের বই জমা দেয়। আমি সাথে  সাথে একটু উঁকি মেরে ২১০ ঘরের সামনে থাকা সিকিউরিটিতে থাকা মেয়ে গার্ডকে দেখতে পেয়ে বললাম ‘ম্যাডাম কার্ড জমা পড়েছে বাক্সে’। সে ওমনি হাত ঘড়িতে সময় দেখল। আমি বললাম, ‘আপনার হাতে দেব’? সে আমার হাত থেকে বই দুটো সহ বাক্স নিয়ে ভেতরে চলে গেল। আমি মনে মনে নিশ্চিত হলাম যে কার্ড দুটো জমা পড়েছে ভাগ্যিস আগে এসেছি। নইলে হয়তো আর কার্ড জমাই নিতো না। এই ভেবে অলোককে বললাম চলো তো, ভীষণ গরম লাগছে, ভেতরে বসার জায়গা পাই কিনা দেখি।
দু’জনে ওয়েটিং রুমে এসে দেখি খুব ভিড়। তাও আমি একটা ফ্যানের নিচে চেয়ারে বসার জায়গা পেলাম, বসেও পড়লাম। অলোক বাইরে দাঁড়িয়ে থাকল। আমি তো বসলাম। মনে এলোমেলো চিন্তা। খানিক বাদেই একটা শব্দ কানে এলো, হুঁ হুঁ করে কান্নার মতো। তাকিয়ে দেখি আমার থেকে আর একটু দূরে সামনের দিকে চেয়ারে বসা একজন মহিলা, মাথাটা ছাড়ানো ওলের মতো, আসলে কেমোথেরাপি হয়েছে ওনার। সে মাথা নাড়ছে আর ওই আওয়াজ করে ঘার নাড়ছে দু’দিকে। খেয়াল করে দেখি একজন কালো মাঝবয়সি স্বাস্থ্য ভালো ভদ্রলোক তাকে কিছু খেতে বলছে, আর সে খাবে না বলছে, তাতেই ওই কান্না। এদিকে ঘরে বেশির ভাগ রোগীরই কেমো হয়েছে, কেউ বা নতুন কেমো নিতে এসেছে, মহিলা সংখ্যায় বেশি। রোগীদের সাথে তাদের বাড়ির লোকও আছে। সেদিন এত গরম, আর বেলা সাড়ে ১২টার পর থেকেই সকলে অধৈর্য্য হয়ে পড়ছে।
এর মধ্যে সেই ভদ্রলোক (যিনি সামনের দিকে মহিলাকে খাবার জন্য জোরাজুরি করছিলেন) ২১০ নম্বর ঘর থেকে ঘুরে এসে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করছেন আর ডাক্তার, সিস্টারদের গাল দিচ্ছেন। কারণ ওনার লাল বই সিস্টার ওনার কাছ থেকে নিয়ে কোথায় ঢুকিয়েছেন, অনেকক্ষণ ধরে খুঁজে পাচ্ছেন না, এখন বলছে বই পাওয়া যাচ্ছে না অতএব ওদের অপেক্ষা করতে হবে।  এদিকে ওনার বউ বসতেই পারছেন না, কিচ্ছু খেতে চাইছেন না, গায়ে ঘাড় ও পিঠের কাছে র‍্যাশ বেরিয়েছে। ভদ্রলোক তাই কেমোথেরাপি চলা ওনার বউকে নিয়ে এসেছেন ডাক্তার দেখিয়ে একটু ওষুধ নেবেন যাতে ওনার কিছুটা উপশম হয়।
প্রায় ধৈর্য্য হারিয়ে তিনি চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘সেই ভোর পাঁচটায় বেড়িয়েছি, ৪ ঘন্টা জার্নি করে এসেছি, আবার ৪ ঘন্টা জার্নি করে ফিরতে হবে। আমাদের কষ্ট ওনারা বুঝবে? ওরা তো ওখানে ঘরে বসে মজা মারছে। আর আমাদের হেনস্থা করছে। ওরা কি চিকিৎসা ঠিকমতো করে? আমার তো মনে হয় চিকিৎসাও ভুল করে? কেউ আসে এখানে … ? ছ’মাস ধরে আসছি এই ন্যাকামি চলছে।’ আমি দেখলাম তার মুখ রাগে বেগুনি হয়ে গেছে।
এরপর সে একবার তার বউকে নিয়ে ২১০ নম্বর-এর দরজা খুলে ঢুকে পড়েছিলেন, সিস্টার ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন। এবার সে এতো রেগে গেছে যে সে বউকে বলছে, ‘চলো তো, আর ডাক্তার দেখাতে হবে না, আজ তোমাকে মেরে আমি রেলে গলা দেব।  চলো ওঠো ওঠো, আর  বসে থাকতে হবে না।’ এর মধ্যে আমার পাশে একটা চেয়ারে অলোক এসে বসেছিলো, ওতো ওখান থেকেই ‘ও দাদা, শুনুন ও দাদা শুনুন, কিন্তু কে শোনে কার কথা?’ ভদ্রলোকের মাথা তখন আগুন। অলোক উঠে গিয়ে তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে অনেক বোঝালো, ‘আমাদের দেশের অবস্থা এরকমই তো, তাই রাগ না করে একটু ধৈর্য্য রাখতে হবে, কারণ নিজের কাছের মানুষের বিপদের দিনে নিজেকে স্থির রাখাই বেশি দরকার, আমাদের প্রত্যেকের জীবনটাই তো একটা লড়াই।’
ভদ্রলোক এরপর একটু ঠাণ্ডা হয়ে এসে বউকে আবার একটু খাওয়ার জন্য বলাতে উনি তখন খেলেন, আসলে তখন উনি মনে মনে একটু ভয়ও পেয়েছেন।  এর কিছু পরে বউটা আমার পাশে এসে বসলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, তারা বাশবেড়িয়া থেকে এসেছেন। এর মধ্যে আরো দু’-তিনজনের কার্ড খুঁজে পাচ্ছেন না বলে তাদের ফেরৎ পাঠিয়েছে, তাই সবাই উত্তেজিত এবং যে সিস্টার এ দায়িত্বে আছেন তাকে খুব গালাগাল করছে। একজন তো বলল, ‘আরে কার্ড হারালো কেন জানেন না? কার্ড হারালে নতুন কার্ড করতে হবে ২০ টাকা দিয়ে। এতে তো এদের লাভ। একটা ব্যবসা, বুঝলেন না?’  আর একজন তার বাবাকে নিয়ে উনিশ বছর ধরে সেই সরোজ গুপ্ত’র আমল থেকে এই হাসপাতালে আসছেন। সে বলল জানেন, দিনকে দিন এটার অবস্থা খারাপ হচ্ছে। এদিকে চার্জ বাড়িয়ে যাচ্ছে। সরোজ গুপ্ত’র ছেলে এই হাসপাতালটাকে খারাপ করে ফেলেছে। এদিকে এক ভদ্রলোক আমাকে বলছেন, ‘আচ্ছা আপনারা কলকাতাতেই থাকেন, তাই না? আচ্ছা এই রোগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কিরকম মনে হয়? আসলে জানেন, আমরা তো মফস্বলে থাকি, যতই হোক না কেন মফুস্বলের চেয়ে কলকাতার লোকেরা অ্যাডভানসড্‌। আমার বাড়ি সিঙ্গুরে, যদিও কলকাতাতে চাকরি করি। আপনারা তো হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় যাচ্ছেন না। তার মানে …’ — বলে ঘাড়টা দু’দিকে নাড়াতে থাকে। আমি ওনাকে বললাম, আমার বিদ্যে অনু্যায়ী আসলে এই রোগের চিকিৎসা কী আছে, তা বোঝা মুশকিল। শুধু যে জায়গায় হয়েছে, তাকে যদি কেটে বাদ দেওয়া যায় এবং তারপর সেই জায়গাটা কেমোথেরাপি, বা রেডিওথেরাপি করে সেই জায়গাটা পুড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে কিছুদিনের জন্য অসুখটা রোখা যায়।
উনি শুনে বললেন, ওনার স্ত্রীর কোলনে ক্যানসার হয়েছে এবং সেটা কেটে বাদ দেওয়া গেছে মেডিকেল কলেজে।  মেডিকেল কলেজে অপারেশন করেছেন যে ডাক্তারবাবু তিনিই ওনাকে ঠাকুরপুকুরে পাঠিয়েছেন। সেই ডাক্তারের ওপর ভদ্রলোকের অনেক আস্থা আছে বলে বোঝা গেল। আমি আর অলোক তখন ওনাকে বললাম, আপনার স্ত্রীর যা অসুখ তা ভালো হয়ে যাবে, চিন্তা নেই। উনি শুনে ঘাড়টা নাড়তে থাকলেন। এর মধ্যে ওই আগের সেই রাগী ভদ্রলোক তার বউকে নিয়ে ২১০ নম্বর ঘরে ডাক পেয়ে গিয়ে দেখিয়ে বাইরে এলেন। তখন মুখে একটা শান্তির ছাপ। একজনের কাছে গিয়ে ছলছল চোখে বললেন, জানেন, আমার ছেলের ২৯ তারিখ থেকে পরীক্ষা, তার মধ্যে ওর মায়ের এই অসুখ। আমি কি চাই ওকে মারতে, আমি তো ওকে তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতেই চাই। এই বলে বউকে তাড়াতাড়ি বের হতে বললেন, বউটা আমাদের হাত নাড়িয়ে আসছি দিদি বলে বেরিয়ে গেল।
এদিকে অনেক বেজে যাচ্ছে আমাদের ডাক আসছে না। আমি ভাবছি সেরেছে, আমার কার্ড যদি হারিয়ে ফেলে থাকে। বলে বেরিয়ে ২১০ নম্বর-এর ঘরের দিকে যেতে গিয়ে দেখলাম মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা অন্য দরজায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি সে সময় দরজার সামনে গিয়ে উঁকি মারতে যেতেই সিকিউরিটি মহিলা দরজা বন্ধ করে দিল। আমি অলোককে বললাম, হয়েছে অলোক আজ ডাক পেতে অনেক দেরি হবে। ওই দেখ সব রিপ্রেজেন্টেটিভরা দাঁড়িয়ে রয়েছে। বলতে বলতেই খেয়াল করলাম ২১১ নম্বর ঘর থেকে ডাক্তারবাবু আর এক রিপ্রেজেন্টেটিভ বেরিয়ে আসছে। আমি তখন যা হয় হবে বলে এসে আবার চেয়ারে বসলাম।
তখন দেখলাম একটা বুড়ো লোক খুবই অসুস্থ হয়ে হুইল চেয়ারে বসে আছেন, কিন্তু ওখানে থাকতে চাইছেন না, নামতে চাইছেন, কথা বলতে পারছেন না। ক্যাথিটার লাগানো রয়েছে, কেউ কাছে যাচ্ছে না দেখে নিজেই নামার চেষ্টা করছেন। আমি ভাবছি — মহা মুশকিল তো, ওনার সাথের লোকেরা কোথায়? এর মধ্যেই সিকিউরিটি মহিলা আসতে আমরা বললাম, রোগী পড়ে যাচ্ছে, সে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে ওয়ার্ড বয়কে ডেকে আনলো। আর বুড়ো ভদ্রলোকের সাথে বাড়ির যে ছেলেটা ছিল সেও এলো। স্ট্রেচারে করে তাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। এরই মধ্যে আমি ওয়ার্ড বয়কে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম আমার কার্ডের কথা। স্বামীর নাম বলতে বলল, ‘ফাইল বের করে দিয়েছি।’ আমি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে বসে অলোককে বললাম, আজ মনে হয় ডাক্তারকে কিছু জিজ্ঞাসা করা যাবে না, ডাক্তারের মাথাতো গরম  হয়ে  থাকবে।
শেষ পর্যন্ত বেলা তিনটের সময় ডাক এলো। আমরা দু’জনে ছুটে গিয়ে ঢুকলাম ২১০ নম্বরে। এখন ডাক্তারদের টেবিলে চারজনের জায়গায় দু’জন বসে রয়েছেন।  বাকি দু’জনকে চলে যেতে দেখেছি। আমরা বসলাম। তখন আমাদের ডাক্তারকে পাশের ডাক্তারবাবুকে বললেন, জানেন, ‘ডাঃ সমাজদার তো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ওনার চোখ মুখ ভালো লাগছিলো না। নার্ভে চাপ হচ্ছিল। আমি বললাম, চোখে মুখে জল দিন।’ আমাদের ডাক্তার, ডাঃ রায় তখন বলছেন, ‘হবে না, দেখুন তো ফাইলের পাহাড়, তারমধ্যে এত হট্টগোল, আমি এই ১১ বছর ধরে করে যাচ্ছি, সপ্তাহে প্রতিদিন এই চাপ সহ্য করা যায়। তিনদিন হলেই হত, আর সহ্য করা যাচ্ছে না।’ তখন সেই সিস্টার বলছেন, ‘আর পারছি না, সকাল থেকে এতো খাটছি তবু ওরা এসে আমাকে বলছে, আমি কোন কাজ করছি না।’ আমাদের ডাক্তারবাবু তাই শুনে সিস্টারকে বলছেন, ‘আপনি আর একটু তাড়াতাড়ি’, উনি বলে উঠলেন ‘এই বয়সে আর পারছি না’। শুনে ডাক্তারবাবু হাসতে হাসতে বললেন, ‘কত বয়স হয়েছে আপনার? এদিকে দেখুন তো, এই দিদি এই বয়সে কেমন করে টাট্টু ঘোড়ার মতো এখান থেকে ওখান লাফিয়ে বেড়াচ্ছেন।’ এইসব শুনে আমি বুঝলাম যে আমাদের ডাক্তারবাবুর মাথা ঠাণ্ডা রাখার একটা ক্ষমতা আছে, না হলে এই সময়েও এত রসিকতা আসে ওনার মাথায়।
যাক, এবার উনি আমার সাথে কথা বলতে লাগলেন, প্রতি সপ্তাহে কেমো হবে, কেবিনে ভর্তি হতে হবে না, উনি কেমো দিয়ে ছেড়ে দেবেন ইত্যাদি। ভর্তি হতে হবে না শুনে আমার আনন্দ হল, কিন্তু তখনই মনে হলো ওষুধ কিনবো কোথা থেকে? আগের বার যা হেনস্থা হতে হয়েছিল। ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আচ্ছা আপনি ওষুধ কোথা থেকে নেব সে ব্যাপারে কোনো সাজেশন দিতে পারেন?’ উনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন? আপনাকে তো জুনিয়ার ডাক্তাররা ড্রিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে ওষুধ আনিয়ে দিতেন?’ আমি বললাম, ‘আমার ঝামেলা হতো না, কিন্তু গতবার হাসপাতালের সামনে একটা বড় দোকানে খুব বাজে ব্যবহার পেয়েছিলাম।’ উনি বললেন, ‘কেন? কী হয়েছিলো?’ তখন আমি ওনাকে সংক্ষেপে আমার আগের দিনের অভিজ্ঞতাটা বললাম।
ওষুধের দোকানের ছেলেটা ওষুধের দামে কিছু রিডাকশন দেবে বলেছিলো। আগের দিন আমি তো গেছি ওষুধ আনতে। আমার সামনেই ছেলেটা একজনকে বলল কম দামিটা আনতে। আমি তখন ছেলেটাকে বলেছি, ‘আচ্ছা আপনি তো আমাকে রিডাকশন দেবেন বলেছিলেন, অথচ এখন আপনি কম দামের ওষুধ আনতে বলছেন। বেশি দাম আর কম দামে কি ওষুধের কোয়ালিটিতে তফাত হবে? ব্যস্‌, ওরা দোকানের সবাই তো খুব ক্ষেপে গেল। আমার প্রেসক্রিপশনটা আমাকে দিয়ে বলল, ‘যান এখান থেকে, আপনাকে ওষুধ নিতে হবে না, আপনি ওষুধের কী বোঝেন? আপনার ডাক্তারবাবু বুঝবে, কেউ বুঝবে না, ল্যাবরেটরীতে নিয়ে গিয়ে টেস্ট করতে হবে।’ আমি বুঝলাম, কেউটের লেজে পা দিয়ে ফেলেছি। এদিকে আমার তো হাতে সময় নেই, আর ভয় লাগলো ওদের ব্যবহারে যে যদি ওষুধটা কোথাও না পাই তো এখানেই আসতে হবে, তখন ওরা আরো যা তা বলবে। আমি তাই বললাম, ‘দেখুন, আমার পেশেন্টের শরীরটা তো ভালো না, আপনারা ওরকম করে বললেন বলে আমি বলেছি। তাহলে আমাকে অন্য ওষুধটা (সেটাও দামী, রক্ত হওয়ার জন্য পেটে দেয়) তো দিন।’ তখন ছেলেটা বলল, ‘আমি তো আপনাকে সব ওষুধটাই দিতে চাইছি।’ ওখান থেকে ওষুধ নিয়ে এসে হাসপাতালে দিলাম, মনে একরাশ বিরক্তি এবং সন্দেহ নিয়ে।
ডাক্তারবাবু আগের দিনের অভিজ্ঞতা সব শুনলেন চুপ করে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে কিনতে পারব? উনি বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ। এই ওষুধের খুব বেশি দাম হবে না। আর এর পরে যদি দামী কেমোটা দিতে হয়, সেটা তো একটা কোম্পানিই বের করেছে, অতএব আপনার ঝামেলা হবে না। এই বলে সবুজ বইটার ভিতরেই রক্ত পরীক্ষার নির্দেশ দিয়ে ২ সেপ্টেম্বর বুধবার কেমোর জন্য যেতে বললেন।