- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘কোনো সভ্য দেশেই মহিলা কামরা বলে কিছু থাকাই উচিত না, কিন্তু যদি থাকে তাহলে বুঝতে হবে …’

বর্ণালী চন্দ, ব্যারাকপুর, ২১ আগস্ট#

la

নিত্যযাত্রীদের কথা লিখতে গেলেই লীলা মজুমদার মনে পড়ে। তখন, ‘সাধারণ (ট্রাম)গাড়িতে গোটা চারেক মেয়েদের সিট থাকত। সেখান থেকে বড়ো জোর পুরুষকন্ঠের খ্যাঁক খ্যাঁক শব্দ কানে আসত।’ ‘মেয়ে-চাকরে’ বোঝাই গাড়ির ‘অনেক দূর থেকে একটা গুণগুণ শব্দ শোনা যায় …। বড্ড ভালো লাগে।’ এছিল সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত যুগের কথা। স্বাধীনতার পর নারী স্বাধীনতা নিয়ে লড়াই হয়েছে। নারীদের ‘স্বাধীনতা’ ‘দেওয়া’ হয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, মুক্ত নারীদের কাল্পনিক দশ হাতের চিত্র অঙ্কন করেছে। অতএব নারী তখন ঘর বাহির দুই-ই সামলে ক্ষমতাসীমার দশগুণ বেশি কাজ করছে। পুরুষদের কাজের চরিত্রের খুব হেরফের ঘটেনি। মহিলারা অভিযোগ করে নিজের ক্ষমতাকে খর্ব করার ‘বোকামো’ করতে চায় না।
ফলে ফিটফাট কাকিমা, বৌদিরা যখন স্টেশনে আসেন মাতৃভূমি লোকালটি ধরার জন্য আসে তখনও তাদের নখের কোনে হলুদ গুঁড়ো, কিন্তু মাতৃভূমি লোকাল আবার (রোজকার মতোই) আধঘন্টা লেট। সকালের মাতৃভূমি খালি তো যাবেই। কোনোদিন তো ঠিক সময়ে আসে না ওটা। অতএব সেই গেদে, রাণাঘাট লোকালের আধখানা লেডিজই ভরসা। কিছু বছর আগে অব্দি এই গাড়ির প্রথম দিকে একটা গোটা কামরা ছিল মহিলাদের জন্য। ট্রেনের পেছনের দিক থেকে আসা মহিলাকে দৌড়ে এসে আটটা কামরা পেরিয়ে সামনের লেডিজে ওঠার তাড়ায় দুর্ঘটনা কম হয়নি।
তখন এই শতাব্দীর প্রাক্কালে সামনে ও পেছনে দু’টি লেডিজ কম্পার্টমেন্ট দেওয়ার কথা ভাবা হয়। মেয়েরাও আনন্দিত। কিন্তু একী! উঠতে গিয়ে দেখে ভেন্ডারে উঠে পড়েছে। কারণ একটা মহিলা কামরাকে দু-ভাগ করে সামনে ও পেছনে দেওয়া হয়েছে। অর্ধেক মহিলা কামরা (দুটি গেট), বাকি অর্ধেক ভেন্ডার। ভেন্ডারের লোকজন যারপরনাই খুশি। বহুদিন অব্দি তারা লেডিজ ও ভেন্ডারের পার্টিশনের ফাঁক দিয়ে দু-চোখ ভরে মেয়েদের হেনস্থা হওয়া, ভিড়ের চাপে নাকাল হয়ে তুমুল ঝগড়া, মারামারি দেখেছে আর বিপুল আনন্দ পেয়ে শিস দিয়েছে। উল্লাসে তাল ঠুকেছে পার্টিশনের ওপরেই। ফলে ওই পার্টিশনে হেলান দিয়ে বসা মহিলা যাত্রীরা ধাক্কা খেতে খেতে গন্তব্যে পৌঁছেছে। প্রতিবাদ করলে ধাক্কা বেড়েছে বা জুটেছে লাথি যা ধাতব পার্টিশন ভেদ করে ভালোই মালুম হতো। এভাবেই কাটল আরো কিছু বছর। একটা গোটা কামরা হঠাৎ আধখানা হয়ে যাওয়ায় ভিড়ের চাপ বাড়ল। মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়তে লাগল। বসা ও দাঁড়ানোর জায়গা দখলের লড়াই উঠল তুঙ্গে। সর্বসাধারণের জন্য কামরার ভিড়ের মধ্যে ব্যস্ততম সময়ে এক সারিতে দাঁড়ায় ৫-৬ জন। মহিলা কামরায় সেটাই ৮-৯ জন হয়ে গেল (শরীরের অনুপাত নির্বিশেষে)। সামনের লেডিজে ভিড় বেশি, তাই পেছনের লেডিজে যাওয়া সুবিধা ভেবেছিল অনেকে। বছর খানেকের মধ্যেই দেখি তারা সেই সামনেই। কেন? আরে প্রতিদিন ভিড় বাড়ছেই। কোনো লেডিজেই পা রাখার জায়গা নেই। বয়স্ক চাকুরিরতা আর ক’জন? দেখা যাচ্ছে একটা সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্ম, যাদের কিছুদিন আগেও কলেজ করতে দেখেছি। এখনই তারাই অফিসযাত্রী। সরকারি, বেসরকারি সমস্ত রকম কাজের ও শিফটের লোক। ট্রেনে করে বেড়াতে যাওয়ার লোক প্রায় দেখিই না। ভর দুপুরেও দ্বিতীয় শিফটের ডিউটিতে মহিলারা যাচ্ছে। ভিড় তো বেড়েই চলেছে গত পনেরো বছর ধরে। কিন্তু কামরা বরাদ্দ ওই আধখানাই।
ভিড়ে গাদা কামরায় উঠে বলি, ‘জেনারেল-এ গেলেই ভালো হত’। পাশের জেঠিমাও সায় দিলেন, ‘সত্যি বাবা। তাও একটু দাঁড়ানো যেত। আর সহ্য হয় না আ-আ-আ ছাড়ো-ও-ও।’ সরু প্যাসেজে ৮ জনের ভিড় একজন বেরোচ্ছে। তার কাপড়ের সেফটিপিনে আটকেছে এনার চুল। কোনোক্রমে ছাড়িয়ে নিয়ে তিনজনের পা মাড়িয়ে যেতে হলো তাকে। এত ভিড় কী করা যায়? পা তুললেই আরেকজনের পা এসে জায়গা দখল করবে। পাশের জেঠিমা চুল সামলে বললেন, ‘জেনারেল-এ তো যাওয়াই যায়, কিন্তু ওই যে গায়ে হাত দেওয়া অসভ্যতা মা’। পাশের কম-বয়সী বেশি-বয়সী মেয়েরা সায় দিল। ‘হ্যাঁ, এই ভিড় হলে তো কথাই নেই।’ একজন বললেন, ‘ভাবতে পারেন, যেদিন খুব গরম ছিলো, সেদিন রাত আটটা তিরিশে স্টেশনে ঢুকেছে গাড়ি। তার মধ্যে কেউ একজন ‘হাত চালালো”। একটু নড়ারও উপায় নেই যে কায়দা করে ধরবো হাতটা। আবার হাত চালালে বললাম, ‘দাদা এই গরমে এত এনার্জি আছে?’। আমরা সহযাত্রীরা হেসে উঠলাম, ক্লান্ত, ক্ষুদ্ধ, চরম বিরক্তির হাসি। আরও কিছু নিত্যযাত্রী এই ‘হাত চালানো’র অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন। কেউই দু-তিন মাসের বেশি জেনারেল-এ যেতে পারেননি। বিশেষ করে তারা, যারা দলছুট, একা যাতায়াত করে। যারা দলবদ্ধ হয়ে যায়, ছেলে ও মেয়ে বন্ধু নিয়ে, তাদের এ অভিজ্ঞতা একটু কম। সত্যিই কোনো সভ্য দেশেই মহিলা কামরা থাকা উচিত না — যদি থাকে তাহলে বুঝবেন …
বছর কুড়ি আগে এক স্কুলের বন্ধু বলছিল তার জেনারেল কামরায় চড়ার অভিজ্ঞতার কথা। মাসীর বাড়ি যাচ্ছিল বাবা মায়ের সাথে। পেছনে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দাদা-কাকার দল তার বাবাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এই প্রচণ্ড ভিড়ে ‘বোন’কে ঠিক দমদম স্টেশনে নামিয়ে দেবে। বাবা মা নেমে গেলেও ওই ‘বোন’ কে দাদা-কাকুরা নামতে দেয়নি সহজে। দু-পাশ থেকে বুক আর পেছন থেকে পা দিয়ে ঊরুসন্ধিতে আঘাত করে আটকে রেখেছিল। উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলে, ঠিক ট্রেন ছাড়ার আগের মুহুর্তে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সেই দাদা-কাকুরা তাকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল ট্রেন থেকে। বাবা ধরে নিয়েছিল, তাই রক্ষে। সে আমাদের সব বলে স্তব্ধ আক্রোশে শুধু বলেছিল, ‘ওরা সব্বাই ঠিক মরে যাবে’।
অন্য একজন বন্ধু বলেছিল ক্লাস সিক্সে জেনারেল কামরায় বন্ধুদের সাথে স্কুলে যাওয়ার কথা। দাদারা পেছনে দাঁড়িয়ে ধাক্কা দিচ্ছিল। নামার আগে হাসতে হাসতে বলে, ‘যাও বাড়ি গিয়ে স্কার্টটা ধুয়ে নিও।’
কিন্তু এই সব কুড়ি বছর আগের কথা। মহিলা কামরা বা ট্রেন কোনো সভ্য দেশেই থাকা উচিত না, কিন্তু …।
সময় বদলেছে। পড়ুয়া জীবনের পনেরো বছরের মধ্যে যদি দশবার জেনারেল-এ উঠি, তবে তার মধ্যে পাঁচবার ‘হাত চালানো’র ঘটনা ঘটেছে। তবে চারবারই তাদের ধরে ফেলে উত্তম-মধ্যম দিয়েছি। কিন্তু রোজ যাত্রায় কারই বা ভালো লাগে এসব? তাই মেয়েদের জেনারেল-এ ওঠাটাকে পুরুষরাও পছন্দ করে না আর। উঠলেই তো কিছু হবে। আবার হ্যাপা, চিৎকার, চেঁচামেচি, জিআরপি। তা বাবা মেয়েছেলের কামরায় গিয়ে উঠলেই তো পারো। অতএব কাউকে বিরক্ত না করে অগত্যা সেই আধখানা মহিলা কামরা। সেখানেও কি রগঢ় কম? প্রচণ্ড ভিড়ে গাদাগাদি ট্রেন যখন দমদম ঢুকছে, তখন বেলঘরিয়ায় সদ্য ওঠা যাত্রীরা মরিয়া ভেতরে ঢোকার জন্য আর দমদমের যাত্রীরা মরিয়া বাইরে বেরোবার জন্য। লাগল হাতাহাতি। বীভৎস চিৎকার, মারপিট, ধাক্কা দেখে দমদমে জেনারেল থেকে নেমে আসা ভদ্রলোকদের ঠোঁটে বিদ্রূপের হাসি। ‘মেয়েছেলেদের কাণ্ড দেখো’ বলে টিটকিরি এপাশের কামরা থেকে সিটি। এই নিয়ে ট্রেন তখন বিধাননগরের দিকে। নড়ার জায়গা নেই। কিন্তু ঝগড়ার রেশ রয়ে গেছে। ধাক্কা মেরে গুঁতিয়ে ভিতরে ঢোকার আপ্রাণ চেষ্টা করার কারণ আছে, বিধাননগরে বিপুল যাত্রী নেমে যাওয়ার স্রোতের মুখে পরার আতঙ্ক। আবার মারপিট। আঁচল, ওড়না সামলে যখন শিয়ালদায় ঢুকছে ট্রেন তখন পাশের রেলওয়ে ট্র্যাকে আরেকটা ট্রেন। দরজায় দাঁড়িয়ে হাওয়া খাওয়া ছেলেদের চোখে মজা আর বিদ্রূপ ঝিলিক দিচ্ছে। মহিলা কামরার ঠাসাঠাসি ভিড় আর তীক্ষ্ণ চিৎকারের আওয়াজে তাদের মনে ফূর্তি। এও এক বিনোদন। মহিলা কামরা যে চিড়িয়াখানার আজব এক খাঁচা। ‘শালা মেয়েছেলেদের কামরায় সবসময় কিছু বাওয়াল চলছে’। জেনারেল-এ কোনো মেয়ের চড়া গলা শুনলে মন্তব্য — ‘এই যে দিদি, এটা লেডিজ না, এখানে ওসব চলবে না’। সত্যিই আমি একদম চাই না মহিলা কামরা বা ট্রেন থাকুক। এত কষ্ট করে যাওয়ার কী মানে? কোনো সভ্য দেশেই তো মহিলাদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকার কথা নয়। কিন্তু …
প্রায় দশ বছর ধরে শুনছি শিয়ালদা মেন-এর সব টেন বারো বগি হবে। সেই অনুযায়ী প্লাটফর্মও বাড়ানো হলো। কিন্তু বারো বগি সব হলো কি? ২০১০ এ প্রথম মাতৃভূমি লোকাল দেখে ভীষণ বিরক্ত আর ক্ষুদ্ধ হয়েছিলাম। তখন সদ্য চিন দেশ ঘুরে এসেছি। ওখানে মহিলা যাত্রী, ড্রাইভার, টিটি আর গার্ডদের দাপট দেখে এসেছি। বিশ্বাস করেছি, যে দেশ-এ মেয়েদের স্বাধীকার রক্ষার ক্ষমতা নেই, শিক্ষা ও সম্মান নেই, সেই দেশ কোনোদিন উন্নত হতে পারে না। আমরা প্রতিদিন যখন স্ত্রী-পুরুষ বিভেদ এবং ফলস্বরূপ অসাম্যের বিরুদ্ধে কথা বলছি, তার চিহ্ন প্রতিদিন শরীর ও মনে বহন করে ফিরছি। সেই প্রেক্ষাপটে মাতৃভূমি লোকাল এই অসাম্যের নির্মাণে আরেকটি প্রস্তরখণ্ড। মাতৃভূমি লোকাল হলো সেই লজ্জা এবং অসাম্যের প্রতীক যা আমাদের মনে করায়, মহিলারা সাধারণ কামরায় নিগৃহিত এবং মানুষ তার প্রতিবাদ করতে অক্ষম। যে মহিলারা কাজের পর বাড়ি ফেরার তাড়া নিয়ে স্টেশনে আসতেন, বা বয়স্কা মহিলা বা শিশু সহ অসুস্থ, যারা কোনোদিন ‘অফিস টাইম’-এ বেরোনোর সাহস করেননি, মাতৃভূমি লোকালে তারা আশ্বস্ত হলেন। সাধারণ কামরা বা লেডিজ কামরায় ‘অফিস টাইম’-এ যে কোনো শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তির উপস্থিতি কাম্য নয়। অতএব … মাতৃভূমি। অভিযোগ, মাতৃভূমি খালি যায়। আমার দেখা বিকেল পাঁচটা পাঁচ বা পাঁচটা পঞ্চাশের ট্রেনগুলি কোনোদিন ফাঁকা থাকে না। পুরুষের প্রবল নিষেধ মাতৃভূমিতে। কিছু মহিলা (একসময় হয়ত নিজেরাই হেনস্থা হওয়া মহিলার দল) পুরুষদের অপমান করে, তাও সত্যি। কিন্তু মাতৃভূমির ফলে যারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়, তারা হলো জিআরপি। কোনো পুরুষ ভুল করে উঠে পড়লে মহিলারা কিছু না বললেও জিআরপি তাদের ছাড়েনি। কিন্তু রাগটা পড়ত সেই মেয়েদের ওপরেই। না থাকত মাতৃভূমি, না থাকত লেডিজ কামরা, না থাকত মেয়ে, না থাকত ‘প্রবলেম’।
এসব এখন সবাই জেনে গেছে। কিন্তু সবকিছুর ওপর লক্ষ্যনীয় হলো পুরুষ ও নারী অসাম্য, দ্বন্দ্ব ও পারস্পরিক অবিশ্বাসের ক্রমবর্ধমানতা কোনো একসময় লাঞ্ছিত হওয়া নারী আর পুরুষকে ছেড়ে কথা বললনা। পরিণতি মারাত্মক। কোনো ট্রেন বিভ্রাটের সময় জেনারেল-এ পরিণত হওয়া মাতৃভূমিতে চলত পুরুষদের তাণ্ডব। যেখানে পুরুষের ভিড় ও তাদের হাতে মহিলাদের নাকাল হওয়ার দৃশ্য অবর্ণনীয়। মাতৃভূমিতে উঠতে চাওয়া মহিলাদের পুরুষরা উঠতে দিলেন না। দরজা আটকে দাঁড়িয়ে রইলেন, বললেন, ‘এটা জেনারেল। এখানে ওঠা যাবে না’। বিভ্রান্ত যাত্রীরা দৌড়ে লেডিজের দিকে এসে দেখে, সেখানেও দরজা আটকে পুরুষ। অত ছোটো দরজা দিয়ে ওঠা অসম্ভব। কামরার মধ্যে মহিলা ও পুরুষের পারস্পরিক কু-বাক্য বিনিময় ও চোখে মুখে তীব্র ঘৃণার বহিপ্রকাশ এক ভয়াবহ অশুভ ইঙ্গিত নিয়ে আসে। তারই বহিপ্রকাশ সদ্য ঘটা ঘটনাগুলি। এ যেন অধিকার দখলের এক ভীষণ অসম লড়াই। নিত্য যাত্রী ছাড়াও যারা নতুন যাত্রী, তাদের নাকাল হওয়ার শেষ নেই। নেই স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে। চেনা দাদা, কাকা, বৌদি, কাকীমারা একে অন্যের শত্রু। এই অসাম্য অশান্তি অবিশ্বাসের মূল শিকড় অনেক গভীরে। একটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে রেল কর্তৃপক্ষ পুরুষ ও মহিলা যাত্রীদের সংখ্যা, শিক্ষার্থী এবং চাকুরিরতা মহিলাদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার তুলনামূলক অনুপাত সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিষ্পৃহ। যতদিন এই বিষয় অগ্রাহ্য করা হবে, যতদিন মেয়েদের অস্তিত্বকে বিদ্রূপাত্মকভাবে দেখা হবে ও গুরুত্ব সহকারে দেখা না হবে, ততদিন এই অসাম্য বাড়বে।
মাতৃভূমিক কেন, আমার মতে সভ্য দেশে মহিলা কামরা থাকারই প্রয়োজন নেই। যেখানে নারী আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্যই হলো পুরুষ-নারী অধিকারের সাম্য রক্ষা করা সেখানে যে বঞ্চিত তার সমস্যার মূল উৎস না খুঁজে তাদের সম্পূর্ণ পৃথক ও বিশেষ একটি শ্রেণী বলে চিহ্নিত করা, সেই মূল সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তোলা বই কিছুই হবে না। বিভেদ শুধু পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অসহিষ্ণুতা বাড়বে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কোনোদিনই এই বিভেদ, অসাম্য কমানোর চেষ্টা করা সহজ কাজ নয়।
কল্পনা করি, একদিন সব কামরাই সর্বসাধারণের জন্য হবে। পুরুষ মহিলা একসাথে একই কামরায় উঠবে। ওঠার সময় কেউ গায়ের জোর দেখাবে না। যে আগে আসবে, সে আগে উঠবে। যে গায়ের জোর দেখাবে তাকে সবাই এমন দৃষ্টিতে দেখবে যে সে লজ্জা পাবে। তারপর পুরুষ নারী একসাথে গন্তব্যের দিকে যাবে। গান করবে, সুন্দর গল্প তৈরি হবে। কোনো সুযোগসন্ধানী পুরুষের বিরুদ্ধে মহিলা ও পুরুষ উভয়েই সোচ্চার হবে। তার বিরুদ্ধে নিয়মমাফিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভব্য পুরুষ যাত্রী ভয় পাবে। যে কোনো মহিলাকে জিজ্ঞেস করলে দেখেবেন তারা এইরকম পরিবেশই চায় কি না?